পূর্ব এশিয়ায় ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে তুলে এবার তাইওয়ান প্রণালী অতিক্রম করল চিনের সবচেয়ে শক্তিশালী ও অত্যাধুনিক বিমানবাহী রণতরী ‘ফুজিয়ান’ (CV-18)। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক (MND) মঙ্গলবার এই সামরিক গতিবিধি নিশ্চিত করেছে। শুধু সমুদ্রেই নয়, আকাশপথেও চিনা যুদ্ধবিমানের নজিরবিহীন অনুপ্রবেশে কার্যত যুদ্ধের আবহাওয়া তৈরি হয়েছে এই দ্বীপরাষ্ট্রে।
ফুজিয়ান হলো চিনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী এবং প্রথম কোনো রণতরী যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। এর বিশেষত্বগুলি হলো:
ক্যাটাপাল্ট সিস্টেম: এতে রয়েছে উন্নত ক্যাটাপাল্ট-সহায়ক টেক-অফ ব্যবস্থা, যা ভারী যুদ্ধবিমানকে খুব অল্প দূরত্বে দ্রুত গতিতে উড়িয়ে দিতে সক্ষম।
প্রশান্ত মহাসাগরে দাপট: এই রণতরী মোতায়েনের মাধ্যমে চিন মূলত পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণ চিন সাগরে বিদেশি শক্তির (বিশেষত আমেরিকা) হস্তক্ষেপ রোধ করতে চাইছে।
ভীতি প্রদর্শন: প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুজিয়ান-এর এই টহল তাইওয়ানকে সরাসরি সামরিক বার্তা দেওয়ার একটি বড় অংশ।
আকাশপথেও আগ্রাসন: ৪০টি যুদ্ধবিমান চিহ্নিত
তাইওয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে তারা তাইওয়ানের চারপাশে ৪০টি চিনা সামরিক বিমান এবং ৮টি নৌ জাহাজ শনাক্ত করেছে।
এর মধ্যে ২৬টি যুদ্ধবিমান তাইওয়ান প্রণালীর ‘মধ্যরেখা’ (Median Line) অতিক্রম করে তাইওয়ানের উত্তর, মধ্য, দক্ষিণ-পশ্চিম এবং পূর্ব এডিআইজে (ADIZ) প্রবেশ করেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাইওয়ানের সেনাবাহিনী (ROC Armed Forces) পাল্টা নজরদারি ব্যবস্থা এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় করেছে।
১৯৪৯ সালের গৃহযুদ্ধের পর থেকেই তাইওয়ান ও চিনের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘ। চিন ‘এক চিন’ নীতির অধীনে তাইওয়ানকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে। অন্যদিকে, তাইওয়ান একটি স্বতন্ত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও অর্থনীতি নিয়ে নিজেদের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখেছে।
সাম্প্রতিককালে তাইওয়ানের চারপাশে চিনের এই ঘনঘন অনুপ্রবেশ আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে আমেরিকার সঙ্গে তাইওয়ানের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্কের মুখে বেজিং-এর এই রণতরী প্রদর্শন এশিয়ায় নতুন কোনো যুদ্ধের ইঙ্গিত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।