সমাজের মেরুদণ্ড হলেন শিক্ষক। শিক্ষকেরাই সমাজ গড়ার কারিগর। বাবা-মায়ের পর ছেলেমেয়েদের অভিভাবক তাঁদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শুধু শিক্ষাদান করাই নয়, উৎসবের মরশুমে এক অধ্যাপিকা যা করলেন, তা সমাজের কাছে এক বিশাল দৃষ্টান্ত। শুধু ছাত্রছাত্রীদের শেখান নয়, তিনি শিখিয়েছেন গোটা সমাজকে—মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মর্ম। নিজের পেশাগত জীবন শেষ হওয়ার পরও তিনি বেঁচে রইবেন সকলের মধ্যে।
সম্প্রতি, অঙ্গদান এবং দেহদানের মতো এক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা, রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয় (গোপ কলেজ)-এর পুষ্টিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপিকা শ্রাবন্তী পাইন। দীর্ঘ প্রায় আট বছর ধরে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত তিনি।
দীর্ঘ এক দশক ধরে তিনি ছাত্রছাত্রীদের সমাজের এক দেওয়াল হিসেবে গড়ে তুলেছেন এবং সমাজের মূল স্রোতে এগিয়ে দিয়েছেন। তবে এবার নিজেই নিয়েছেন নিজের জীবনে এক সাহসী পদক্ষেপ। তাঁর মৃত্যুর পর শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং সম্পূর্ণ দেহদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এই মর্মে তিন মাস আগেই তিনি আবেদন করেছিলেন এবং সেই প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে।
অধ্যাপিকার বক্তব্য, দৈহিক জীবনে শুধুমাত্র পড়াশোনা বা সমাজের হয়ে কাজ করাই যথেষ্ট নয়। যে মানুষ সামান্য একটি অঙ্গের জন্য প্রতিদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, নিজের মৃত্যুর পরেও তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্র সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সহযোগিতায়, এই সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধ্যাপিকা শ্রাবন্তী পাইন। সংগঠনের সদস্য তথা শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত বলেন, অধ্যাপিকার এই সাহসী সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তিনি শুধু একজন শিক্ষিকা নন, প্রকৃত সমাজ গড়ার কারিগর। মৃত্যুর পর নশ্বর দেহকে প্রথাগতভাবে পুড়িয়ে ফেলা নয়, মৃত্যুর পরও তিনি বেঁচে রইবেন অনেকের শরীরে। এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ সমাজের কাছে এক বিশাল দৃষ্টান্ত।
তিনি একদিকে যেমন অধ্যাপিকা, তেমনই অন্যদিকে ডায়েটিশিয়ান। ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর পাশাপাশি মানুষকে সুস্থ থাকতে দেন টিপস। এবার সমাজকে সুস্থ রাখতে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন নিজের দেহদান এবং অঙ্গদানের মাধ্যমে। শিক্ষিকার এই ভাবনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ।