যে শহর নিজস্ব ইতিহাসের অলেখা অধ্যায় রচনা করেছে, সেই নিজামের শহর হায়দরাবাদ আজও জ্বেলে রেখেছে ঐতিহ্যের দীপশিখা। মুক্তোর ছটা আর বিরিয়ানির সুবাসে ভরপুর এই শহর যেন এক অনন্য সুরের মেলবন্ধন—যেখানে অতীত ও বর্তমানের হাত ধরে হাঁটে সৌন্দর্য। আর সেই হায়দরাবাদেই শাড়ি রাজত্ব করে তার নিজস্ব গরিমায়, নারীত্ব ও শৈল্পিকতার শাশ্বত প্রতীকে পরিণত হয়ে।
প্রাচীন বয়নকলার নিপুণতা যখন আধুনিক নকশার নান্দনিক ছোঁয়ায় মিশে যায়, তখনই জন্ম নেয় এক নতুন সৃষ্টির গল্প। সেই গল্পই ধ্বনিত হচ্ছে হায়দরাবাদ শাড়ি উৎসবে। ভারতের বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় নকশা কেন্দ্রের (NDC) সহযোগিতায় আয়োজিত এই বিশেষ প্রদর্শনীটি ২৪ থেকে ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ পর্যন্ত আমিরপেটের কাম্মা সঙ্গমে চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শাড়ি শিল্পীরা একত্রিত হয়েছেন এই অনুষ্ঠানে, যা এককথায় ঐতিহ্য ও কঠোর পরিশ্রমের এক অনবদ্য প্রকাশ।
প্রতিটি শাড়ি একটি গল্প বোনে…
এই উৎসবে দর্শকরা কেবল চোখ দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন হাতেবোনা শাড়ির পরতে পরতে বোনা পরিশ্রম, শিল্প আর আবেগের অমলিন ছোঁয়া। প্রতিটি শাড়ি যেন ছয় বা নয় গজ বিস্তৃত একটি কবিতা। এখানে বেনারসির ব্রোকেড থেকে শুরু করে মুঘল বাগানের প্রেরণায় রেশমে বোনা শাড়ি এবং অন্ধ্রের পোচমপল্লি ইকাতের জ্যামিতিক ভাষ্য—প্রত্যেকটির নিজস্ব সৌন্দর্য প্রদর্শিত হচ্ছে। কাঞ্চিপুরম সিল্ক, জামদানি মসলিন, চান্দেরি, পাটোলা, মহেশ্বরী ও টাঙ্গাইল শাড়ি, প্রত্যেকটি যেন আলাদা আলাদা গল্প বলছে।
এই উৎসবে প্রাচীন কৌশল ও সমসাময়িক ডিজাইনের আধুনিক প্রয়াস একসঙ্গে উদ্ভাসিত হয়। এই মিলন যেন হায়দরাবাদের নিজস্ব চরিত্রকেই তুলে ধরে, যেখানে ঐতিহ্য ও আধুনিকতা মিলেমিশে একাকার। এই অনুষ্ঠান সেই সমস্ত মানুষকে সম্মান জানায়, যাঁরা দেশের বুনন ঐতিহ্য ও স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখেন। এই শাড়ি উৎসবে সকলে বিনামূল্যে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি, সহযোগিতা এবং বস্ত্রমন্ত্রী তুম্মলা নাগেশ্বর রাও এবং টি টি ডি-এর বোর্ড মেমবার শ্রী জি. ভানু প্রকাশ রেড্ডি।