ভারতে অনলাইন জালিয়াতি ও সাইবার অপরাধের গ্রাফ এখন আকাশচুম্বী। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে, ২০২৫ সালের প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৯৮ লক্ষ থেকে ১.১ কোটি ভারতীয় হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ (Ban) করা হচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এত বিপুল সংখ্যক অ্যাকাউন্ট ব্লক করার পরেও স্ক্যামারদের রোখা যাচ্ছে না। এই সংকট মোকাবিলায় এবার হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত সরকার।
কেন ব্লক করেও থামানো যাচ্ছে না জালিয়াতি? হোয়াটসঅ্যাপের মাসিক কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাসেই সর্বোচ্চ ১১.২ মিলিয়ন অ্যাকাউন্ট ব্যান করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের দাবি, এই অ্যাকাউন্টগুলির সিংহভাগই স্প্যাম এবং ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ স্ক্যামের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু সমস্যা হলো, হোয়াটসঅ্যাপ কেবল অ্যাকাউন্ট ব্যান করে, সেই মোবাইল নম্বরগুলোর বিস্তারিত তথ্য সরকারের সঙ্গে শেয়ার করে না। ফলে অপরাধীরা একবার ব্যান হলে নতুন সিম কার্ড বা অন্য প্ল্যাটফর্ম (যেমন টেলিগ্রাম) ব্যবহার করে ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে।
স্ক্যামের নতুন স্বর্গরাজ্য +91 নম্বর? তদন্তে দেখা গিয়েছে, ভারতীয় কান্ট্রি কোড (+91) ব্যবহার করে হাজার হাজার জাল নম্বর তৈরি করা হচ্ছে। ডিজিটাল অ্যারেস্টের মতো ভয়াবহ প্রতারণার ৯৫ শতাংশই ঘটছে হোয়াটসঅ্যাপ কলের মাধ্যমে। সরকারের যুক্তি, হোয়াটসঅ্যাপ যদি ব্যান করা নম্বরগুলোর কেওয়াইসি (KYC) বা পরিচয়ের তথ্য না দেয়, তবে জাল নম্বর শনাক্ত করা অসম্ভব। অন্যদিকে, হোয়াটসঅ্যাপ তাদের ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন’ নীতির দোহাই দিয়ে তথ্য শেয়ারে অনড়।
সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ: ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক (MeitY) স্পষ্ট জানিয়েছে, সাধারণ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত চ্যাট নয়, বরং শুধুমাত্র অপরাধী ও ব্যান হওয়া নম্বরগুলির তালিকা চাওয়া হচ্ছে। একবার অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে সিম কার্ড ছাড়াও অ্যাপ চালানো যায়, যা সাইবার অপরাধীদের জন্য বড় অস্ত্র। সরকার এখন সিম ট্রেসিং এবং নম্বর ভেরিফিকেশন নিয়ে কঠোর আইন আনার কথা ভাবছে। এনক্রিপশন বনাম সুরক্ষার এই লড়াইয়ে সাধারণ মানুষের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা এখন বড়সড় প্রশ্নের মুখে।