গত তিন সপ্তাহে দেশে ১৬ জন বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) মারা যাওয়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরে নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন যে দেশে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে বিএলও-দের উপর ‘নিপীড়ন এবং নির্যাতন’ চলছে।
কাজের বোঝা একপ্রকার ‘অত্যাচার’
একটি হিন্দি দৈনিকের খবরকে উদ্ধৃত করে রাহুল গান্ধী নিজের হ্যান্ডেলে লিখেছেন যে, এই পরিস্থিতি একপ্রকার ‘আরোপিত অত্যাচার’। বিএলও-রা কাজের এই বিপুল বোঝা বইতে পারছেন না।
ভোটার তালিকা সংশোধনের নিবিড় প্রক্রিয়া (SIR) নিয়ে প্রথম থেকেই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব রাহুল। তাঁর দাবি, বিরোধী দলের ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই কমিশন এই বিশেষ সংশোধনীর আয়োজন করেছে। তিনি বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগও তুলেছেন।
বিজেপির পাল্টা আক্রমণ ও খোলা চিঠি
রাহুল গান্ধীর এই অবস্থান এবং কর্মসূচি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতো কেন্দ্রের শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীরা পাল্টা সরব হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, পরিকল্পিতভাবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের অবমাননা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, গত সপ্তাহে অবসরপ্রাপ্ত আমলা, আইনজীবী এবং সাবেক সেনাকর্মী সহ প্রায় আড়াইশো জন রাহুল গান্ধীকে একটি খোলা চিঠি লিখে সতর্ক করেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন যে রাহুল ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থার গরিমাকে ভুলুণ্ঠিত করছেন এবং কমিশনকে রাজনীতিতে না জড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
‘মান্ধাতার আমলের’ পদ্ধতি ও ভোট চুরির কৌশল
তবে এই সমস্ত প্রতিক্রিয়ায় দমে যাননি রাহুল। তিনি ফের SIR-এর বিরুদ্ধে সরব হয়ে প্রশ্ন তুলেছেন—যে দেশ বিদেশে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা রপ্তানি করে, সেই দেশের নির্বাচন কমিশন কেন এখনো ‘মান্ধাতার আমলে’ পড়ে আছে? কেন কোটি কোটি মানুষকে দু’দশক আগের হাজার হাজার পাতার ভোটার তালিকায় নিজের নাম খুঁজতে বাধ্য করা হচ্ছে?
রাহুলের মতে, এটা একটা কৌশল। যাতে ভোটাররা বিরক্ত হয়ে তালিকায় নাম রাখার বিষয়ে অনিগ্রহী হয়ে ওঠেন। তাঁর কথায়, এটিও এক ধরনের ‘ভোট চুরির কৌশল’। তিনি উল্লেখ করেন যে দৈনিক লক্ষ্যপূরণের প্রশাসনিক চাপ, রাজনৈতিক চাপ এবং অবৈধ অভিবাসী চিহ্নিত করার সংবেদনশীলতার কারণে বিএলও-দের উপর চাপ আরও বেড়েছে।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও রাহুলকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি এক্স-এ পোস্টে লিখেছেন, বিএলও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এই পরিবারগুলিকে ন্যায়বিচার কে দেবে? তাঁর মতে, ‘পরিকল্পনা ছাড়া তাড়াহুড়ো করে… জোর করে SIR প্রয়োগ করায় নোটবন্দি এবং কোভিড লকডাউনের স্মৃতি ফিরে এসেছে।’