ভারত কি সত্যিই ‘সুপারপাওয়ার’? স্বপ্ন নয়, দেশবাসীকে বাস্তবের আয়না দেখালেন রঘুরাম রাজন

ভারত কি সত্যিই বিশ্বমঞ্চে ‘সুপারপাওয়ার’ বা মহাশক্তিধর দেশ হয়ে উঠেছে? নাকি আমরা এক অলীক স্বপ্নে বিভোর? সম্প্রতি একটি পডকাস্টে অংশ নিয়ে এই বিষয়ে এক বিরাট সতর্কবার্তা দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। তাঁর মতে, ভারত এখনও লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে। বিশ্বশক্তিতে উন্নীত হতে ভারতকে আগামী অন্তত ৩০ বছর নিরলস পরিশ্রম বা ‘হোমওয়ার্ক’ করে যেতে হবে।

জিডিপি-র আসল অংক ও রাজনের বিশ্লেষণ
ভারতের বর্তমান জিডিপি (GDP) বৃদ্ধির হার দেখে অনেকেই আশাবাদী। কিন্তু রাজন এখানে এক সূক্ষ্ম অর্থনৈতিক মারপ্যাঁচ ধরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মতে:

জিডিপি ডিফ্লেটর: বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কম থাকায় ভারতের আসল বৃদ্ধির হার বা রিয়েল গ্রোথ রেট কাগজ-কলমে বেশি মনে হচ্ছে।

উন্নয়নশীল দেশের তকমা: বড় দেশগুলোর তুলনায় ভারত দ্রুত হারে বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা আজও উন্নয়নশীল দেশের তালিকাতেই আটকে রয়েছি। চীন বা আমেরিকার মতো শক্তিধরদের সারিতে বসতে গেলে শুধুমাত্র জিডিপি-র সংখ্যা বাড়লে চলবে না।

জাদুমন্ত্র নয়, চাই ‘একনিষ্ঠ কর্ম’
রঘুরাম রাজনের স্পষ্ট কথা— সুপারপাওয়ার হওয়ার কোনো শর্টকাট বা জাদুমন্ত্র নেই। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী ভারত গড়ার এই লড়াইয়ে অংশ নিতে হবে সকল স্তরের মানুষকে:

সেনাবাহিনী থেকে সাধারণ নাগরিক: প্রত্যেককে নিজ নিজ ক্ষেত্রে ফাঁকি না দিয়ে কাজ করতে হবে।

পেশাদারদের ভূমিকা: ডাক্তার, অধ্যাপক, বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের উদ্ভাবনী শক্তিই হবে দেশ গড়ার আসল হাতিয়ার।

তাঁর মতে, এই পথটি যতটা সাধারণ মনে হচ্ছে, বাস্তবে তা ততটাই কঠিন। কোনো পর্যায়েই অলসতা বা ফাঁকি দেওয়ার জায়গা নেই।

আগামী তিন দশকই হবে ‘অগ্নিপরীক্ষা’
রাজন মনে করিয়ে দিয়েছেন, অর্থনীতির এই ম্যারাথন দৌড়ে ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আগামী ৩০ বছরের ওপর। এই তিন দশক যদি ভারত ধারাবাহিকভাবে কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক নীতি প্রয়োগ করতে পারে, তবেই ‘সুপারপাওয়ার’ হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পাবে। অন্যথায়, আমরা শুধুমাত্র সম্ভাবনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাব।

প্রাক্তন গভর্নরের এই বিশ্লেষণ ভারতের নীতিনির্ধারক ও সাধারণ নাগরিকদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে— আমরা কি সত্যিই আগামী ৩০ বছরের সেই ‘হোমওয়ার্ক’ করতে তৈরি?

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy