তৃণমূল সাংসদ এবং বর্ষীয়ান আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিচারপতিদের নিয়ে করা মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক এবং বিচারবিভাগীয় মহলে শোরগোল পড়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণের প্রতিক্রিয়ায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, “এখন বিচারপতিরা বেশি কথা বলেন”। এই মন্তব্যের আইনি দিক এবং এর পরিণতি নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত।
আইনি পদক্ষেপের সম্ভাবনা কতটা?
সাংসদ কল্যাণের এই মন্তব্যের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, সেই প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত বলেন:
“বিচারব্যবস্থা বা বিচারকদের টিকে থাকাটা কোনো জনপ্রিয়তার উপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে ভারতীয় সংবিধানের ধারা অনুযায়ী। এই ধরনের কথাগুলো এতই অপ্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বহীন যে এইগুলো নিয়ে বিচারব্যস্থা খুব একটা গুরুত্ব দেবে বলে আমার মনে হয় না।”
তবে তিনি একইসঙ্গে আদালত অবমাননার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন:
ফৌজদারি অবমাননা: যদি আদালত অবমাননার কোনো ফৌজদারি অবমাননার প্রশ্ন ওঠে, তবে সংশ্লিষ্ট আদালত ‘প্রভাব ও উদ্দেশ্য’—এই দুটো বিষয়ের উপর দাঁড়িয়ে বিচার করবে।
আইনি পদক্ষেপের পথ: এই ধরনের মন্তব্য আটকাতে আইনে সুনির্দিষ্ট কোনো ধারা না থাকলেও, যেকোনো ব্যক্তি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। অথবা আদালত স্বতঃপ্রণোদিতভাবে (Suo Motu) ব্যবস্থা নিতে পারে। আদালত অবমাননায় দোষী প্রমাণিত হলে জেল বা জরিমানা হতে পারে।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য করা ঠিক হয়েছে কি না—এই প্রশ্নের জবাবে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বলেন, “মন্তব্যটা অপ্রাসঙ্গিক, তবে এই ধরনের মন্তব্য কাম্য নয়।”
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক কী বলেছিলেন?
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত পর্যবেক্ষণ করে প্রশ্ন করেছিলেন যে, রোহিঙ্গাদের কি সরকার শরণার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে? এবং কেন তাঁদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে? এই প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন:
“ওঁর মন্তব্যের জবাব দেওয়া আমার সাজে না। কারণ উনি প্রধান বিচারপতি। কিন্তু, একটা কথা বলব, কোনো বিচারপতিরই আলগা মন্তব্য করা উচিত নয়। আগে বিচারপতিরা কম কথা বলতেন। আজ সব বদলে গিয়েছে। এখন বিচারপতিরা বেশি কথা বলেন।”