বিহার ভোটের আগে পিকে-র বড় বিপদ! দুই রাজ্যের ভোটার তালিকায় নাম, আইন ভঙ্গের অভিযোগে তোলপাড়

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর প্রথম দফার ভোটের ঠিক আগে, রাজনৈতিক কৌশলী এবং ‘জন স্বরাজ’-এর প্রধান প্রশান্ত কিশোর (পিকে) বড় আইনি সমস্যায় পড়তে চলেছেন। নির্বাচন কমিশনের রেকর্ড থেকে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে যে প্রশান্ত কিশোরের নাম একই সঙ্গে দু’টি রাজ্য—পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারের ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত রয়েছে, যা ‘জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫০’ (Representation of the People Act, 1950)-এর সরাসরি লঙ্ঘন।

কোথায় কোথায় পিকে-র নাম নথিভুক্ত?

রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রশান্ত কিশোরের দু’টি জায়গায় ভোটার হিসেবে রেজিস্টার্ড থাকার তথ্য মিলেছে:

পশ্চিমবঙ্গ (কলকাতা): তাঁর নাম কলকাতার ১২১, কালীঘাট রোড ঠিকানায় নথিভুক্ত রয়েছে, যা তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) প্রধান দপ্তর এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরের অন্তর্গত। তিনি ২০২১ সালের নির্বাচনে টিএমসি-র কৌশলবিদ ছিলেন।

বিহার: তাঁর দ্বিতীয় রেজিস্ট্রেশন বিহারের রোহতাস জেলার পৈতৃক গ্রাম কোঁয়ার-এর ভোটার তালিকায় রয়েছে। বর্তমানে তিনি ‘জন স্বরাজ’ যাত্রার মধ্য দিয়ে বিহারেই সক্রিয়।

জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের লঙ্ঘন

এই বিষয়টি গুরুতর, কারণ জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১৭ নম্বর ধারা স্পষ্টভাবে বলছে যে কোনো ব্যক্তির নাম একাধিক নির্বাচনী এলাকায় নথিভুক্ত থাকতে পারে না। একইভাবে, ১৮ নম্বর ধারা নিশ্চিত করে যে কোনো ব্যক্তি একই এলাকায় দুবার ভোটার হিসেবে রেজিস্টার্ড হতে পারবেন না। আইন অনুযায়ী, বাসস্থান পরিবর্তন করলে ভোটারকে অবশ্যই ফর্ম ৮ পূরণ করে পুরনো জায়গা থেকে নাম সরানোর জন্য আবেদন করতে হয়।

যদি এটি প্রমাণিত হয় যে প্রশান্ত কিশোর ইচ্ছাকৃতভাবে দু’টি রাজ্যেই নিজের নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন এবং নিয়ম মেনে পুরনো নাম সরানোর জন্য আবেদন করেননি, তবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করার প্রক্রিয়াও শুরু করতে পারে।

টিম পিকে-র সাফাই ও সিপিএমের অভিযোগ

এই বিতর্ক নিয়ে প্রশান্ত কিশোর নিজে কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে তাঁর দল ‘জন স্বরাজ’-এর এক সিনিয়র সদস্য সাফাই দিয়ে বলেছেন যে, “পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের পর প্রশান্ত কিশোর বিহারে ভোটার কার্ড তৈরি করিয়েছিলেন এবং পশ্চিমবঙ্গের কার্ডটি বাতিল করার জন্য আবেদনও করেছেন। এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

অন্যদিকে, সিপিআইএম দাবি করেছে যে তারা গত বছরই এই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলেছিল। সিপিএম নেতা বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম যে প্রশান্ত কিশোর এখানকার বাসিন্দা নন, তাই তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে সরানো হোক।”

এই বিতর্কটি এমন এক সময়ে সামনে এল যখন নির্বাচন কমিশন দেশব্যাপী ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (SIR) অভিযানের অধীনে ডুপ্লিকেট ভোটারদের শনাক্ত করার কাজ করছে। বিহার নির্বাচনের ঠিক আগে শুরু হওয়া এই বিতর্কে নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকেই সকলের নজর।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy