মঙ্গলবার ভারতীয় শেয়ার বাজার দিনের শুরুর সব লাভ উল্টে দিয়ে প্রায় অর্ধ শতাংশ পতনের সঙ্গে দিনভর অস্থিরতা দেখালো। প্রধানত দুর্বল বৈশ্বিক ইঙ্গিত এবং বিদেশী তহবিলের ধারাবাহিক বহির্গমনের প্রভাবে বাজার নিম্নমুখী হয়েছে।
দুপুর ১:৩৮ নাগাদ, সেনসেক্স ৪৪৩.২৪ পয়েন্ট কমে ৮১,৮৮৩.৮১-এ নেমে আসে, অন্যদিকে নিফটি ১২৮.৬৫ পয়েন্ট কমে ২৫,০৯৮.৬০-এ দাঁড়িয়েছে। যদিও সূচকগুলি দিনের শুরুতে ইন্ট্রা-ডে হাই স্পর্শ করেছিল, কিন্তু দ্রুতই গতিপথ পাল্টে যায়।
পতনের নেতৃত্ব দিল বাজাজ ফিন্যান্স, টাটা স্টিল
এই পতনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাজাজ ফিন্যান্স, টাটা স্টিল, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, বিইএল, টিসিএস এবং ট্রেন্ট-এর মতো হেভিওয়েট শেয়ারগুলি। উল্টোদিকে, লাভের মুখ দেখেছে টাটা মোটরস, টেক মহিন্দ্রা, এইচসিএল টেক, এইচইউএল এবং পাওয়ারগ্রিড।
এসএস ওয়েলথস্ট্রিটের প্রতিষ্ঠাতা সুগন্ধা সচদেভা এই প্রসঙ্গে বলেন, “গত দু’সপ্তাহের উত্থানের পর, বেঞ্চমার্ক সূচক নিফটি এই সপ্তাহটি দুর্বলভাবে শুরু করেছে এবং বর্তমান ট্রেডিং সেশনে প্রায় ০.৫৯% কমেছে। এর প্রধান কারণ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া বাণিজ্য উত্তেজনা।”
অশনি সংকেত! চিন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধেই বাজারে চাপ
সচদেভা আরও জানান যে চিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিরল মৃত্তিকা সামগ্রীর (rare earth materials) রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার বিশ্ব সরবরাহের প্রায় ৮০% তারা নিয়ন্ত্রণ করে। এর প্রতিক্রিয়ায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চিনা আমদানির ওপর শুল্ক ১০০% পর্যন্ত বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন, যা ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হতে পারে। এই বাণিজ্য যুদ্ধ বাজারে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং মার্কিন ফেডের সুদের হারের গতিপথ নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
বাজার এখন অক্টোবরের শেষের দিকে ফেডের বৈঠকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেট কমানোর ৯৭% সম্ভাবনা ধরে এগোচ্ছে, কিন্তু এই ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনা ফেডের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে পারে।
ভয়ের মাঝেও আশার আলো: নজর রাখুন এই স্তরে
বাজারের অস্থিরতা পরিমাপক ইন্ডিয়া ভিআইএক্স (India VIX) ৩%-এর বেশি বেড়ে ১১-তে পৌঁছেছে, যা ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রতিফলিত করে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা নিম্ন স্তরে সূচকটিকে ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। টেকনিক্যাল দিক থেকে, ২৪,৮০০-তে শক্তিশালী সাপোর্ট রয়েছে। এই স্তরটি ধরে রাখতে পারলে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
এফআইআই-এর ধারাবাহিক বহির্গমন ও টাকার পতন
বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (FIIs) গত তিন মাস ধরেই বিক্রেতা। গতকালও তারা ২৪০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে, যা বাজারের মনোভাবে আরও চাপ সৃষ্টি করেছে। এর পাশাপাশি, বিদেশী তহবিলের বহির্গমন এবং ডলারের মজবুত হওয়ার কারণে ভারতীয় টাকার মানও ৯ পয়সা কমে প্রতি ডলারে ৮৮.৭৭ হয়েছে।
অন্যদিকে, ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল ০.৩৩% বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৬৩.৫৩ ডলারে পৌঁছেছে, যা মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে এবং ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়িয়ে বাজারকে আরও চাপে রাখতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্কতার সাথে আশাবাদী। তাদের মতে, নিফটি যতক্ষণ পর্যন্ত ২৪,৮০০ সাপোর্ট ধরে রাখবে, ততক্ষণ নিম্ন স্তরে নতুন করে কেনার সুযোগ আসতে পারে।