মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বাধীন অসম সরকারের ‘উচ্ছেদ অভিযান ৩.০’ ঘিরে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ ফের উত্তপ্ত। অবৈধ অধিবাসীদের বিরুদ্ধে এই কঠোর অভিযানের শিকার মূলত বাংলাভাষী মিয়া মুসলিম সম্প্রদায়, যারা এখন রাস্তায় নেমে এসে বিশাল বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।
গোলাঘাট জেলার দাহিকাটা রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় গত ৯ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে ১৫৩ হেক্টর জমির উপর ছড়িয়ে থাকা ৫৮৮টি বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে, যার জেরে হাজারো পরিবার বাস্তুহারা। এই উচ্ছেদের প্রতিক্রিয়ায় হাজার হাজার মিয়া মুসলিম রাস্তায় নেমে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, বিক্ষোভকারীরা প্রশাসনের উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও অগ্নিগর্ভ করে তুলেছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই কঠোর পদক্ষেপের পক্ষে জোর সওয়াল করেছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “যদি আজ অবৈধ মিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে কালকের অসমের ভবিষ্যৎ আরও বড় হুমকির মুখে পড়বে। এই ভয়টা ভালোই এটা আমাদের সতর্ক করে।” তাঁর এই বক্তব্য রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ভয়ের সঞ্চার করেছে। মুখ্যমন্ত্রী ৩ নভেম্বর একটি সভায় ঘোষণা করেছিলেন, “অবৈধ মিয়াদের কোনো শান্তি নেই, যতদিন আমি ক্ষমতায় আছি।”
উচ্ছেদের প্রেক্ষাপট ও বিক্ষোভ:
২০২১ সালে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই এই ধরনের উচ্ছেদ অভিযানের তীব্রতা বেড়েছে। জুন ২০২৫-এ পুনরায় শুরু হওয়া ‘ফেজ ৩.০’ তে গোলাঘাট, লখিমপুর, ধুবড়ি, নালবাড়ি এবং গোয়ালপাড়া জেলাগুলোতে ফোকাস করা হয়েছে। সরকারের দাবি, এই জমিগুলি বনভূমি ও রাজস্ব জমির উপর অবৈধভাবে দখল করা হয়েছিল। গত কয়েক মাসে প্রায় ১,৪০০ হেক্টর জমি মুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে প্রায় ২,২০০ পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে।
দাহিকাটা ফরেস্টের ধ্বংসাবশেষের মাঝখানে উচ্ছেদ হওয়া মহিলা-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধরা ‘আমরা অসমের নাগরিক, উচ্ছেদ নয়, ন্যায় চাই’ স্লোগান তুলেছেন। অল অসম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এএমএসইউ)-এর নেতৃত্বে এই বিক্ষোভকারীরা দাবি করেছে, তারা দশকের পর দশক ধরে এখানে বাস করছে এবং চাষবাসই তাদের জীবিকা।
অন্যদিকে, প্রশাসনের অভিযোগ, অভিযানের সময় কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশ ও বুলডোজার অপারেটরদের উপর পাথর নিক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে, যার ফলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অ্যান্টি-রায়ট ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।