২০২০ সালে দলেরই এক কর্মীর নাবালিকা কন্যাকে ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগে অভিযুক্ত দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের ভাইপো তথা গেরুয়া শিবিরের কর্মী সহদেব ঘোড়ুইকে দীর্ঘ পাঁচ বছর গা-ঢাকা দিয়ে থাকার পর অবশেষে পুলিশ গ্রেফতার করতে সফল হল।
গ্রেফতারির বিবরণ:
স্থান: কাঁকসা থানা এলাকার রাজবাঁধ।
সময়: মঙ্গলবার সকালে।
ধরা পড়ার কারণ: পুলিশ সূত্রে খবর, সহদেব গত দু-তিন দিন আগে রাজবাঁধের একজনের বাড়িতে আসেন। এতদিন আত্মগোপন করে থাকলেও, এদিন তিনি প্রাতঃভ্রমণে বের হন। সেই সময় স্থানীয় কেউ তাঁকে দেখে চিনতে পারেন এবং কাঁকসা থানায় ফোন করে খবর দেন। সেই সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ওই এলাকায় পৌঁছে সহদেব ঘোড়ুইকে গ্রেফতার করে।
পুলিশের বক্তব্য: আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা বলেন, “অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ওয়ারেন্ট জারি ছিল। তিনি গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন। আজকে গ্রেফতার হয়েছেন। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সহদেব ঘোড়ুইয়ের পরিচয় ও অভিযোগ:
পরিচয়: সহদেব ঘোড়ুই কাঁকসা থানা এলাকার আমলাজোড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের নিজের ভাইপো। একসময় তিনি কাকার সঙ্গে দলের সামনের সারিতে থাকতেন এবং বিজেপির শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন।
অভিযোগ (২০২০): অভিযোগ ওঠে যে, সহদেব ২০২০ সালে বিজেপির এক কর্মীর নাবালিকা মেয়েকে দুর্গাপুরে ঘুরতে নিয়ে এসে ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে খাইয়ে ধর্ষণ করেন।
ব্ল্যাকমেল: এমনকি সেই ঘটনার ভিডিয়ো করে সহদেব সেই ভিডিয়ো দেখিয়ে নাবালিকাকে ব্ল্যাকমেল করেন এবং একাধিকবার ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। কাঁকসা থানায় সহদেব ঘোড়ুইয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।
পাঁচ বছরের লড়াই ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
আদালতের নির্দেশ: অভিযোগ দায়েরের পর থেকেই সহদেব গা-ঢাকা দেন। পাঁচ বছর ধরে পুলিশ তাঁর খোঁজে তল্লাশি চালিয়েও ব্যর্থ হয়। একসময় সহদেবের খোঁজ না-পেয়ে আদালত তাঁর সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশ জারি করেছিল।
তৃণমূলের খোঁচা: পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এই গ্রেফতারি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। তিনি আইনজীবীদের কাছে অনুরোধ জানান, যেন কোনো আইনজীবী ধর্ষণকারীর হয়ে আদালতে না দাঁড়ান। তিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছেও আবেদন জানান, ধর্ষণের মতো অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য যেন তৃণমূলের সঙ্গে একসঙ্গে লড়াই করেন।
বিজেপির অবস্থান: দলীয় বিধায়কের ভাইপোর গ্রেফতারি নিয়ে বিজেপির পশ্চিম বর্ধমান জেলার সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ দত্ত বলেন, “আইন আইনের পথেই চলবে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি আমরা জানাব। যদি সহদেব ঘোড়ুইয়ের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে আমরা চাইব আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”