দিল্লিতে আফগান মন্ত্রীর হঠাৎ আগমন, ভারত-আফগান ‘গভীর বন্ধুত্বে’ কাঁপছে পাকিস্তান-চিন! কী বার্তা দিলেন নীতীশ?

নয়াদিল্লি: আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী মৌলভি আমির খান মুত্তাকি-এর সাম্প্রতিক নয়াদিল্লি সফরকে আর শুধু সাধারণ কূটনৈতিক সাক্ষাৎ হিসেবে দেখছেন না বিশ্লেষকরা। আঞ্চলিক অস্থিরতার আবহে এই সফর ভারত ও আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সম্পর্ক, অটুট বন্ধুত্ব এবং কৌশলগত সহযোগিতার এক জোরালো পুনর্নিশ্চিতি। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে পাকিস্তান এবং চীনের কাছে স্পষ্ট বার্তা গেল—আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের অংশীদারিত্ব মজবুত, নীতিগত এবং কোনো বহিরাগত চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।

বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনায় উভয় দেশই শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতি তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। ভারত আফগানিস্তানে স্বাস্থ্যসেবা, পরিকাঠামো, মানবিক সাহায্য এবং শিক্ষাসহ বহু ক্ষেত্রে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। ২০টি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেওয়া থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন এবং আফগান শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে ভারত প্রমাণ করেছে যে, এই সম্পর্ক শুধু কূটনীতি নয়, বরং এটি মানব উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ।

পাকিস্তান-চিনকে কড়া বার্তা

এই সফরের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কাবুল-ইসলামাবাদ সম্পর্কের অবনতি। সম্প্রতি পাকিস্তান আফগান ভূখণ্ডে কথিত তালিবান-সম্পর্কিত শিবির লক্ষ্য করে অভিযান চালানোর পর পরই মুত্তাকির দিল্লি পৌঁছানো এক কৌশলগত পরিবর্তনকে নির্দেশ করে।

আফগানিস্তানের এই প্রতিশ্রুতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ভারতের বিরুদ্ধে তাদের ভূখণ্ডকে কোনোভাবেই ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। ছায়া যুদ্ধ এবং প্রক্সি সংঘাতে ভরা একটি অঞ্চলে এই ধরনের স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও নিরাপত্তা স্বার্থে এক গভীর অংশীদারিত্বের ভিত্তি স্থাপন করে।

খনিজ সম্পদ ও বাণিজ্যে ভারতের আমন্ত্রণ

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এই সফর এক উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা তুলে ধরেছে। শুষ্ক ফল এবং ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে শুরু করে পরিকাঠামো পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে বাণিজ্য প্রসারের জন্য আফগান ব্যবসায়ীরা মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আফগানিস্তানের তামা, লিথিয়াম, সোনা এবং মার্বেলের মতো বিশাল খনিজ সম্পদে বিনিয়োগের জন্য ভারতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই উদ্যোগগুলি আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে বৈচিত্র্যময় করার এবং ‘শত্রু’ প্রতিবেশীদের উপর নির্ভরতা কমানোর ইঙ্গিত দেয়।

কাবুলে ভারতের টেকনিক্যাল মিশনকে পূর্ণাঙ্গ দূতাবাসে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার প্রতি ভারতের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতিকে আরও মজবুত করেছে। সব মিলিয়ে, ভারত-আফগান সম্পর্ক আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা জোরদার করছে এবং একটি স্পষ্ট কৌশলগত বার্তা দিচ্ছে: ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy