মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) সম্প্রতি দাবি করেছিলেন যে, ভারত চলতি বছরের শেষের দিকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেবে, যা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) তাঁকে জানিয়েছেন। এই দাবির কিছুদিন পরেই জানা গেল, ভারতের তেল পরিশোধন সংস্থাগুলি (Indian Refiners) ইতিমধ্যে রাশিয়া থেকে তেল কেনা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।
কেন এই স্থগিতাদেশ?
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: মস্কোর প্রধান জ্বালানি কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের কঠোর পদক্ষেপের কারণে ভারতীয় ক্রেতাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। গত সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল উৎপাদক সংস্থা—লুকঅয়েল (Lukoil) ও রসনেফ্টের (Rosneft) বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে।
চাপ বৃদ্ধি: ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার আগের নিষেধাজ্ঞার পর এই পদক্ষেপ রাশিয়ার জ্বালানি বাণিজ্যে আরও চাপ সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ভারতীয় তেল ক্রেতাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে—কোন পথে সরবরাহ আসবে এবং কীভাবে অর্থ পরিশোধ করা যাবে। এই অনিশ্চয়তার কারণে নতুন তেলের অর্ডার আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
সংস্থাগুলির পদক্ষেপ:
হঠাৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় দেশের তেল পরিশোধন সংস্থাগুলি তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে স্পট মার্কেট (Spot Market) থেকে তেল কিনছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (IOC) নতুন তেল আমদানির জন্য টেন্ডার ডেকেছে।
বেসরকারি সংস্থা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, যা ২০২২ সাল থেকে ভারতের সবচেয়ে বড় রুশ তেল ক্রেতা, তারাও স্পট মার্কেট থেকে তেল কেনা বাড়িয়েছে। সংস্থাটি আপাতত রসনেফ্ট থেকে তেল আমদানি বন্ধ রেখেছে বলে জানা গেছে। রিলায়েন্স জানিয়েছে, তারা সব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা মেনে চলবে।
আমদানি চিত্রে পরিবর্তন:
আমদানি হ্রাস: আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (IEA)-র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে ভারত দৈনিক গড়ে ১৯ লক্ষ ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করলেও, নিষেধাজ্ঞা ও ছাড় কমে যাওয়ায় সরবরাহের গতি ইতিমধ্যেই কমেছে।
অন্যান্য উৎসে ঝোঁক: এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারতের রুশ তেল আমদানি আগের বছরের তুলনায় ৮.৪ শতাংশ কমেছে, এবং রিফাইনারিগুলি ক্রমশ মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকা থেকে আমদানির দিকে ঝুঁকছে।
আমেরিকার শুল্কের হুঁশিয়ারি:
এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করেছিলেন যে, রুশ তেল কেনা বন্ধ না করলে ভারতকে অতিরিক্ত শুল্কের মুখে পড়তে হবে। মার্কিন প্রশাসন ইতিমধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি বাণিজ্যে চাপ বাড়াতে ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসিয়েছিল।
তবে এর মধ্যেই বড় খবর সামনে এসেছে যে, ভারতীয় পণ্যে আমেরিকার শুল্ক (USA Tariff) ৫০ শতাংশ থেকে কমে প্রায় ১৫-১৬ শতাংশে নামতে পারে।