জঙ্গলের আড়ালে নিভে যাচ্ছে শিক্ষার আলো! পুরুলিয়ায় অবহেলায় মহাশ্বেতা দেবীর স্বপ্নের ‘শবর’ পাঠশালা

তিনি লড়াই করেছিলেন পিছিয়ে পড়া মানুষদের অধিকারের জন্য। কলম ধরেছিলেন শবর জনজাতির বঞ্চনার বিরুদ্ধে। সেই প্রখ্যাত সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর প্রত্যক্ষ উদ্যোগে আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে পুরুলিয়ার কাশীপুরে গড়ে উঠেছিল একটি স্বপ্নের বিদ্যালয়। লক্ষ্য ছিল— শবর জনজাতির শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু আজ সেই বিদ্যালয়টি ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যাওয়ার মুখে। জঙ্গলের আড়ালে প্রায় বিলীন হয়ে যেতে বসেছে কাশীপুর বিধানসভার মতিপুর গ্রামের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

একসময় এই বিদ্যালয়ে শবর শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকত চারপাশ। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র মাহাতো স্মৃতিচারণ করে জানান, মহাশ্বেতা দেবীর অনুপ্রেরণাতেই এই পথচলা শুরু হয়েছিল। প্রায় ১৫ বছর ধরে স্কুলটি ঠিকঠাক চললেও, ধীরে ধীরে শবর শিশুদের উপস্থিতি কমতে থাকে। অর্থাভাব আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একসময় বন্ধ হয়ে যায় পঠনপাঠন। এখন সেই ভবনটি লতাপাতা আর আগাছায় ঢেকে গিয়ে এক ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে।

আবার কি ফিরবে সুদিন?
হতাশার মেঘের মাঝে আশার আলো দেখাচ্ছেন হুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সন্দীপ সিং সর্দার। তিনি জানিয়েছেন:

মতিপুর গ্রামের শবর মানুষদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন এবং স্থানীয় শিক্ষিত যুবকদের সাহায্য নিয়ে স্কুলটি ফের চালু করতে চান।

মহাশ্বেতা দেবীর স্মৃতি এবং স্বপ্নকে পুনরুজ্জীবিত করতে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সংস্কারের জন্য সবরকম সহযোগিতা করা হবে।

শবর জনজাতির মানুষেরাও চান, তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই স্কুল থেকেই আবার শিক্ষার আলো পেয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসুক।

পুরুলিয়ার মতো জেলায় যেখানে মহাশ্বেতা দেবীর নাম ও কাজ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়, সেখানে তাঁর নিজের হাতে গড়া স্কুলের এমন দশা দেখে ব্যথিত সচেতন সমাজ। যদি সত্যিই প্রশাসন ও পঞ্চায়েত একজোট হয়ে উদ্যোগ নেয়, তবে হয়তো মতিপুর গ্রামের ঘন জঙ্গলে আবার বেজে উঠবে স্কুলের ঘণ্টা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy