গাজা থেকে শেষ জীবিত জিম্মিদের মুক্তির অপেক্ষায় ইসরায়েল, ঘরে ফিরছেন মৃতদেহও।

কায়রো: দুই বছরের যুদ্ধের পর যুগান্তকারী যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে জিম্মি ও বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সোমবার ইসরায়েলিরা গাজা থেকে শেষ জীবিত জিম্মিদের স্বাগত জানাতে এবং মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষের প্রত্যাবর্তনে শোক জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের হাতে বন্দী কয়েকশ ফিলিস্তিনি কয়েদির মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

যুদ্ধবিরতির এই গুরুত্বপূর্ণ পর্বে, মানবিক সহায়তার এক বিশাল ঢেউ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়া গাজায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।

জিম্মি ও বন্দি বিনিময়: স্বস্তি ও উত্তেজনা

ইসরায়েলি টিভি চ্যানেলগুলি জিম্মিদের মুক্তির আগে বিশেষ রাতভর সম্প্রচার চালাচ্ছিল। তেল আবিবের ‘হোস্টেজ স্কোয়ার’-এ ভোর হওয়ার আগেই মানুষের ভিড় জমতে শুরু করে।

মনে করা হচ্ছে, প্রায় ২০ জন জীবিত জিম্মিকে প্রথমে মুক্তি দেওয়া হবে। তাদের ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রস (ICRC)-এর হাতে এবং সেখান থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। তারা রেইম সামরিক ঘাঁটিতে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হবেন।

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির সময় এখনও ঘোষণা করা হয়নি। এদের মধ্যে ইসরায়েলিদের উপর হামলার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২৫০ জন বন্দি ছাড়াও যুদ্ধ চলাকালীন গাজা থেকে আটক হওয়া ১,৭০০ জনকে বিনা অভিযোগে আটকে রাখা হয়েছে।

ট্রাম্পের মধ্যস্থতা ও যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অঞ্চলে এসে পৌঁছেছেন। হোয়াইট হাউসের সময়সূচী অনুসারে, তিনি জিম্মিদের পরিবারের সাথে দেখা করবেন এবং ইসরায়েলের সংসদ নেসেটে ভাষণ দেবেন। ইসরায়েল ও মিশরে সফরের আগে ট্রাম্প সাংবাদিকদের কাছে জোরালোভাবে বলেন, “যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে” এবং এই যুদ্ধবিরতি বজায় থাকবে বলে তিনি মনে করেন।

ট্রাম্প মিশরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি-এর সাথে একটি “শান্তি শীর্ষ সম্মেলন”-এর সহ-সভাপতিত্ব করবেন। এই সম্মেলনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতা মাহমুদ আব্বাসও উপস্থিত থাকবেন।

গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় প্রশ্ন

যদিও জিম্মি ও বন্দি বিনিময় যুদ্ধ অবসানের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে হামাসের ভবিষ্যৎ এবং গাজার শাসনভার নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে:

১. গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন: মার্কিন পরিকল্পনায় একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজা শাসন করবে, যারা ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের দৈনন্দিন কাজ তদারকি করবে। তবে হামাস চায়, ফিলিস্তিনিরাই গাজার সরকার নিয়ে কাজ করুক। ২. হামাসের নিরস্ত্রিকরণ: ইসরায়েল চায় দুর্বল হয়ে পড়া হামাস সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র হোক। কিন্তু হামাস নিরস্ত্র হতে রাজি নয় এবং ইসরায়েলি সৈন্যদের গাজা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চায়। ৩. পুনর্গঠনের ব্যয়: বিলিয়ন ডলারের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার জন্য অর্থ কে দেবে, তা এখনও অমীমাংসিত।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েল এ পর্যন্ত গাজায় ১,৯০,০০০ মেট্রিক টন মানবিক সাহায্য প্রবেশের অনুমোদন দিয়েছে এবং চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ৬০০ ট্রাক সাহায্য প্রবেশের আশা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, “গাজার বেশিরভাগ অংশ এখন বর্জ্যভূমি।”

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy