উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার হাড়োয়ার কামারগাতি গ্রাম একসময় ছিল ঘন জঙ্গলে ঘেরা এক বিপদসংকুল এলাকা। বিদ্যাধরী নদীর তীরবর্তী এই অঞ্চলটি সুন্দরবনের বিস্তৃত বনভূমির অংশ ছিল, যেখানে বাঘ, হরিণ-সহ নানা বন্যপ্রাণীর অবাধ আনাগোনা ছিল। সেই জঙ্গলজীবনে কাঠ, মধু সংগ্রহ ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষের রক্ষাকর্ত্রী হিসেবেই লোকবিশ্বাস গড়ে উঠেছিল বনদেবী বনবিবিকে ঘিরে।
কথিত আছে, ‘রাখে বনবিবি, মারে কে’—এই গভীর বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই এই প্রাচীন মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা পায়। যদিও মন্দিরটির সঠিক নির্মাণকাল আজও স্থানীয়দের কাছেও অজানা। জঙ্গলযাত্রার আগে বনবিবির কাছে পুজো দেওয়ার যে রীতি ছিল, সেই ঐতিহ্যকেই আজও বাঁচিয়ে রেখেছে কামারগাতি গ্রামের মানুষ। প্রতি বছর মহা সমারোহে এখানে আয়োজিত হয় বনবিবির পুজো এবং সেই সঙ্গে বসে এক বিশাল মেলা।
৫ দিনের উৎসবের আকর্ষণ ‘হাজত’
বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পাঁচ দিন ধরে চলে এই বনবিবি মেলা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই মেলা এখন কামারগাতি গ্রামবাসীর অন্যতম সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। পাঁচ দিনের এই মেলা উপলক্ষ্যে দূরদূরান্ত থেকে ভিড় জমান অসংখ্য মানুষ। আলোর ঝলকানি, দোকানপাট, খেলনা, নাগরদোলা—সবকিছু মিলিয়ে উৎসবের রঙে রাঙিয়ে ওঠে গোটা এলাকা।
মেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো ‘হাজত’। মেলার প্রথম তিন দিন ভক্তদের মধ্যে এই বিশেষ প্রসাদ বিতরণের প্রথা রয়েছে। হাজত নেওয়ার জন্য মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়, যা স্থানীয়দের কাছে ভক্তি ও আনন্দের এক বিশেষ অংশ। প্রাচীন বনজীবনের স্মৃতি, বিশ্বাস, ঐতিহ্য আর উৎসবমুখর পরিবেশ, সবকিছু মিলিয়ে আজও অটুট রয়েছে বনবিবির প্রতি এই অঞ্চলের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভক্তি।