আরব সাগরে ‘লাইভ নেভাল ফায়ারিং এক্সারসাইজ’-এর জন্য পাকিস্তান আরও একটি নেভিগেশনাল সতর্কবার্তা (NAVAREA) জারি করেছে। এই সামরিক তৎপরতা এমন এক সময়ে শুরু হচ্ছে যখন ভারত তার বৃহত্তর ‘ত্রিশূল-সার্ভিসেস’ (সেনা, নৌ ও বায়ুসেনা) মহড়া চালাচ্ছে। এটি ভারত-পাক সমুদ্র সীমান্তে লাগাতার সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধিরই ইঙ্গিত।
সামুদ্রিক পরামর্শ অনুযায়ী, পাকিস্তান নৌবাহিনী ২ নভেম্বর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত এই লাইভ ফায়ারিং এবং নৌ-মহড়া পরিচালনা করবে। মহড়ার এলাকাটি বিতর্কিত স্যার ক্রিক অঞ্চলের কাছাকাছি এবং ভারতের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের (EEZ) সংলগ্ন। সতর্কবার্তাটি ১৩৫ কিলোমিটার নেভিগেশনাল এলাকা জুড়ে জারি করা হয়েছে। বাণিজ্যিক ও সাধারণ জাহাজগুলিকে এই সময়কালে নির্ধারিত এলাকা এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।
প্রতিরক্ষা সূত্রের খবর, এই মহড়ার অংশ হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং সদ্য আপগ্রেড করা সাবমেরিন-বাহিত টর্পেডোর সম্ভাব্য ট্রায়াল চালানো হতে পারে। নভেম্বরের জন্য পাকিস্তানের জারি করা একাধিক নটােম (NOTAM) এবং NAVAREA সতর্কতার মধ্যেই এটি নতুন সংযোজন। ১ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত একাধিক আকাশপথ ও সামুদ্রিক নিষেধাজ্ঞা ইতিমধ্যে কার্যকর রয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতের ‘ত্রিশূল’ মহড়ার পটভূমিতে এই সামরিক তত্পরতা একটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। ‘ত্রিশূল’ মহড়ায় ভারতের পশ্চিম ফ্রন্টে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর সমন্বিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
যদিও উভয় পক্ষই মহড়াগুলিকে রুটিন কার্যক্রম হিসাবে দেখায়, কিন্তু স্যার ক্রিক ও ভারতের EEZ-এর কাছাকাছি এই নৌ-ফায়ারিং জোনটির সময় এবং অবস্থান ভারত-পাকিস্তান সামুদ্রিক সীমান্তে বিদ্যমান উত্তেজনা ও পারস্পরিক নজরদারির ইঙ্গিত দেয়। প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘ত্রিশূল’ হল ‘অপারেশন সিন্দূর’-এর পর প্রথম বড় ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধাভ্যাস, যার লক্ষ্য সেই অপারেশন থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাকে পরীক্ষা করা ও যাচাই করা।
এই মহড়ায় সশস্ত্র বাহিনী চ্যালেঞ্জিং ভূখণ্ডে সমন্বিত অভিযান চালাবে, যার মধ্যে রয়েছে ক্রিক ও মরুভূমি অঞ্চলে আক্রমণাত্মক কৌশল, সৌরাষ্ট্র উপকূলের কাছে উভচর অবতরণ (amphibious landings) এবং যৌথ মাল্টি-ডোমেন মহড়া। ভারতীয় বিমান বাহিনী রাফাল, সু-৩০এমকেআই, আরপিএ, ইউএভি, আইএল-৭৮ রিফুয়েলার এবং এয়ারবর্ন আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল (AEW&C) প্ল্যাটফর্ম সহ প্রথম সারির যুদ্ধবিমান মোতায়েন করবে। অন্যদিকে, ভারতীয় নৌবাহিনী বাস্তবসম্মত সামুদ্রিক যুদ্ধের দৃশ্য তৈরি করতে তাদের ফ্রন্টলাইন যুদ্ধজাহাজ এবং অন্যান্য সম্পদ ব্যবহার করবে। ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রায় ২৫,০০০ সৈন্য মোতায়েন করেছে, যাদের মূল যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, কামান, সশস্ত্র হেলিকপ্টার এবং বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সমর্থন করবে। এই মহড়ার সময় বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র ও প্ল্যাটফর্মকে লাইভ অপারেশনাল পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করা হবে।