‘আমাদের পথ ভুল ছিল’-আত্মসমর্পণের আগে স্বীকারোক্তি, মাওবাদী নেতা সোনুর চিঠি ভাইরাল—’অর্থহীন বলিদান নয়’

মহারাষ্ট্রের গড়চিরোলি জেলায় মঙ্গলবার সিপিআই (মাওবাদী)-এর জন্য এক বড়সড় ধাক্কা। এই দলের পলিটব্যুরো এবং প্রবীণ নেতা মল্লজুল্লা বেণুগোপাল রাও, যিনি ‘সোনু’ নামে পরিচিত, ৬০ জন মাওবাদী ক্যাডার-সহ আত্মসমর্পণ করলেন। মাওবাদী সংগঠনের কোণঠাসা অবস্থার মধ্যে এটি এক বিশাল সাফল্য।

গত সপ্তাহে খবর আসে, তেলেঙ্গানার বাসিন্দা সোনু দল থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। একটি চিঠিতে তিনি মাওবাদী ক্যাডারদের ‘নিজেদের বাঁচানোর’ এবং ‘অর্থহীন বলিদান’ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই ঘটনা সশস্ত্র সংগ্রাম পরিত্যাগ করে মূলস্রোতে ফেরার বিষয়ে মাওবাদীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ফাটলকে স্পষ্ট করে তোলে।

 

নেতৃত্বের ভুলে সংগঠনের পতন, মেনে নিলেন সোনু

 

পুলিশের মতে, আত্মসমর্পণের আগে সোনু তাঁর কমরেডদের জানান যে বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি আর সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যেতে পারছেন না। তিনি স্বীকার করেন, মাওবাদীরা যে পথে হাঁটছিল, তা “সম্পূর্ণ ভুল” ছিল। সংগঠনের এই পতন ঠেকাতে না পারার জন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থীও হন। সোনু আরও বলেন যে বারবার নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে মাওবাদীরা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, সিপিআই (মাওবাদী)-এর নর্থ সাব-জোনাল এবং ওয়েস্ট সাব-জোনাল ব্যুরো থেকে সোনু সমর্থন পেয়েছেন এবং তারাও মূলস্রোতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। পুলিশ আরও নিশ্চিত করেছে যে, গত ১৫ আগস্ট সোনু মৌখিক এবং লিখিত বিবৃতি জারি করে যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছিলেন। সেপ্টেম্বরে তিনি আরও একটি বিবৃতি প্রকাশ করে দাবি করেন, বসবারাজু (২১ মে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত) নিহত হওয়ার আগেই এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরোতে আলোচনা হয়েছিল এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

 

২০২৬-এর মধ্যে নকশালমুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ

 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে এবং রাজ্য সরকারগুলির নিরন্তর অভিযানের ফলেই এই আত্মসমর্পণ সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। ২০২৬ সালের মধ্যে নকশালবাদ নির্মূল করার লক্ষ্যেই এই ধরনের ধারাবাহিক অভিযান চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ন্যাশনাল পলিসি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৫ কার্যকর করার ফলে মাওবাদী হিংসা ব্যাপক হারে কমেছে। ২০১০ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে মাওবাদী-সম্পর্কিত হিংসার ঘটনা ৮১ শতাংশ এবং এর ফলে নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর মৃত্যুর ঘটনা ৮৫ শতাংশ কমেছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy