রাজস্থান হাইকোর্ট সম্প্রতি এক যুগান্তকারী রায়ে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক চাইলে আইনতভাবে লিভ-ইন সম্পর্কে থাকতে পারবেন। এমনকি বিবাহের আইনগত বয়স না হলেও তারা এই অধিকার ভোগ করতে পারবেন।
এই গুরুত্বপূর্ণ রায়টি দেওয়া হয় কোটার এক তরুণ-তরুণীর দায়ের করা সুরক্ষা আবেদনের ভিত্তিতে। মেয়েটি ১৮ এবং ছেলেটি ১৯ বছর বয়সী। তারা আদালতে আবেদন করে জানায় যে, তারা স্বেচ্ছায় লিভ-ইন সম্পর্কে আছেন এবং এ বিষয়ে গত ২৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে একটি লিখিত চুক্তিও করেছেন। কিন্তু তাদের পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নিচ্ছে না এবং তাদের হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকেও সাহায্য না পাওয়ায় তারা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
শুনানির সময়, সরকার পক্ষ যুক্তি দেয় যে, যেহেতু ছেলেটির এখনও ছেলেদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স অর্থাৎ ২১ বছর হয়নি, তাই তাদের লিভ-ইন সম্পর্কে থাকার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।
তবে বিচারপতি অনুপ ধান্ড সরকারের এই যুক্তি খারিজ করে দেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন যে, ১৮ বছর হলেই একজন ভারতীয় নাগরিক প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে স্বীকৃতি পান এবং প্রাপ্তবয়স্করা নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম। বিয়ের বয়স আলাদা হলেও, স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার অধিকার সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ (জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার) অনুযায়ী ১৮ বছরেই পাওয়া যায়। আদালত স্পষ্ট করে জানায়, লিভ-ইন সম্পর্ক ভারতে অবৈধ বা অপরাধ কোনোটাই নয়।
আদালত আরও জোর দিয়ে বলে যে, শুধুমাত্র বিয়ের আইনগত বয়স হয়নি বলে কাউকে তার স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। দুজনই প্রাপ্তবয়স্ক হলে, কে কার সঙ্গে থাকবে সেই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে সরকার বা পুলিশ কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
হাইকোর্ট দম্পতির অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে যে, তাদের হুমকির বিষয়টি যাচাই করতে হবে এবং আইন মেনে তাদের সুরক্ষা আবেদনের মূল্যায়ন করতে হবে। যদি সত্যিই তাদের হুমকি দেওয়া হয়ে থাকে, তবে দম্পতিকে অবিলম্বে নিরাপত্তা দিতে হবে।
এই রায়টি স্পষ্ট করেছে যে, ১৮ বছর বয়স হলো প্রাপ্তবয়স্কতা এবং প্রাপ্তবয়স্করা একত্রে থাকতে পারে। এটি লিভ-ইন সম্পর্ককে সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে, এটি বিয়ের আইন পরিবর্তন করবে না বা লিভ-ইন সম্পর্ককে বিয়ের সম্পূর্ণ আইনি মর্যাদা দেবে না। এই রায় সমাজের বহু তরুণ-তরুণীকে তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও সঙ্গী নির্বাচনের অধিকার সম্পর্কে আইনি সুরক্ষা দিল।