শতবর্ষ পেরিয়েও কেন আজও লাল মেদিনীপুরের এই ঐতিহাসিক ভবন? নেপথ্যে লুকিয়ে আছে ডগলাস হত্যার ভয়ঙ্কর ইতিহাস

ব্রিটিশ আমল থেকেই মেদিনীপুর বয়ে চলেছে তার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। এই শহরের অলিন্দে ইংরেজরা গড়ে তুলেছিল তাদের প্রশাসনিক ক্ষেত্র। মেদিনীপুর শহরের বুকে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে তেমনই এক ইতিহাসের সাক্ষী, যা জেলার মানুষের কাছে ‘লাল বাড়ি’ নামেই পরিচিত। বর্তমানে এটি জেলা পরিষদ ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, সময় ও শাসক বদলালেও এর ঐতিহ্যবাহী লাল রং আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। কিন্তু কেন এই ভবনের রং লাল? এর নেপথ্যে কী সেই ভয়ঙ্কর ইতিহাস?

প্রাচীন এই ভবনের ইতিহাস কেবল প্রশাসনিক নয়, এটি জড়িয়ে আছে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে। ব্রিটিশ সময়কালে জেলা শাসন করবার জন্য অবিভক্ত মেদিনীপুর শহরে এটি ম্যাজিস্ট্রেট ভবন হিসেবে স্থাপিত হয়েছিল। ইংরেজ শাসনের আগে এটি ছিল কাছারি বাড়ি। পরবর্তীতে এটি জেলা কালেক্টরের অফিস এবং স্বাধীন ভারতে জেলা পরিষদ অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

লাল ভবনের আসল কাহিনী:

মেদিনীপুর শহরে অবস্থিত তৎকালীন স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন এই লাল ভবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহের কাহিনী।

সালটা ১৯৩২। যখন ভবনটি ব্রিটিশ সরকারের আধিকারিকদের বৈঠকস্থল ছিল, ঠিক সেই সময়েই বিপ্লবীরা এই জেলা পরিষদ ভবনে প্রবেশ করে। বাংলার দুই নির্ভীক বিপ্লবী প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য এবং প্রভাংশু পালের নেতৃত্বে গুলি করে হত্যা করা হয় তৎকালীন অত্যাচারী জেলাশাসক ডগলাসকে।

এই ভবন শুধু প্রশাসনিক কাজের সাক্ষী নয়, এটি পরাধীন ভারতের বুকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত কাঁপানো এক সাহসিকতার প্রতীক। সেই দিনের স্মৃতি, ঐতিহ্য এবং ডগলাস হত্যার সেই রক্তের দাগের প্রতীকী মূল্য নিয়েই আজও জেলা সদরের এই ঐতিহাসিক ভবন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, যা আজও মেদিনীপুরবাসীকে শিহরণ জাগায়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy