রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এসে পৌঁছনোর কথা। তাঁর এই সফরকে কেন্দ্র করে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয়, সিসিটিভি, এআই এবং ড্রোন নজরদারিতে মুড়ে ফেলা হয়েছে রাজধানী শহরকে। পুতিনের জন্য রাশিয়া থেকে নিরাপত্তারক্ষী ও বিশেষ গাড়িও আনা হয়েছে।
দিল্লিতে পৌঁছে পুতিনকে যেখানে আপ্যায়ন করা হবে, সেটি হলো ঐতিহাসিক হায়দরাবাদ হাউস (Hyderabad House)। একসময় এই প্রাসাদটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ধনী শাসক, হায়দরাবাদের শেষ নিজাম মীর ওসমান আলি খানের (Mir Osman Ali Khan) স্বপ্নের বাড়ি। বর্তমানে এটি ভারত সরকারের রাষ্ট্র অতিথি ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়।
হায়দরাবাদ হাউসের ঐতিহাসিক পটভূমি:
ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ: ব্রিটিশরা যখন ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করে, তখন বিভিন্ন প্রিন্সলি স্টেট দিল্লিতে নিজেদের প্রভাব দেখাতে জমি চাইতে শুরু করে।
নিজামের দাবি: নিজাম মীর ওসমান আলির দাবি ছিল, ভাইসরয় হাউসের ঠিক পাশেই জমি চাই। ব্রিটিশরা আপত্তি জানালে, কিংসওয়ে (Kingsway)-এর শেষে কিং জর্জ পঞ্চমের মূর্তির চারপাশে পাঁচটি প্রিন্সলি স্টেটকে জমি দেওয়া হয়—যার মধ্যে হায়দরাবাদ ছিল অন্যতম।
লুটিয়েন্সের নকশা: হায়দরাবাদ ও বরোদার বাড়ি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বিখ্যাত স্থপতি এডউইন লুটিয়েন্সকে (Edwin Lutyens)। নিজাম ভাইসরয়ের বাড়ির মতো বিশাল প্রাসাদ চেয়েছিলেন। সরকারি অনুমোদন মেনে লুটিয়েন্স ভাইসরয় হাউসের মতো একটি গম্বুজ (Dome) রাখেন এবং বাকি নকশাটি তাঁর বিখ্যাত ‘বাটারফ্লাই প্ল্যান (Butterfly Plan)’ অনুযায়ী তৈরি করেন।
স্থাপত্য ও বৈশিষ্ট্য:
খরচ ও আকৃতি: ১৯২০-র দশকে প্রায় ২ লক্ষ পাউন্ড ব্যয়ে তৈরি এই প্রাসাদটি ছিল দিল্লির প্রিন্সলি বাড়িগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড়। প্রাসাদটি প্রজাপতি আকৃতির (Butterfly-shaped building), দুই ডানা দু’দিকে ছড়ানো।
অভ্যন্তরীণ সজ্জা: এটির ভিতরে ৩৬টি কক্ষ (36 rooms) রয়েছে। ইউরোপীয় ধাঁচের সিঁড়ি, ফোয়ারা, ফায়ারপ্লেস, আর্চওয়ে এবং মুঘল মোটিফ-এর সমন্বয়ে এর নকশা তৈরি।
মূল আকর্ষণ: প্রাসাদের মূল আকর্ষণ কেন্দ্রের বিশাল গম্বুজ, ৫৫ ডিগ্রি কোণে বিস্তৃত ডানা এবং মার্বেল বিছানো রম্বিক নকশার (Rhombic Marble Design) ফ্লোর। এতে আলাদা জেনানা (Zenana) কক্ষও ছিল।
স্বাধীনতার পর ভাগ্য পরিবর্তন:
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ‘অপারেশন পোলো’-র মাধ্যমে হায়দরাবাদ রাষ্ট্র ভারতীয় ইউনিয়নে যুক্ত হয় (১৯৪৮)। এর পরে প্রাসাদটিতে নিজামদের আনাগোনা কমে যায় এবং এটি ভারত সরকার অধিগ্রহণ করে।
১৯৭৪ সালে বিদেশ মন্ত্রকের হাতে দায়িত্ব যাওয়ার পর ১, অশোক রোডের এই প্রাসাদটি রাষ্ট্র অতিথি ভবনে পরিণত হয়। তারপর থেকেই এটি বিল ক্লিন্টন, জর্জ বুশ, ভ্লাদিমির পুতিন-সহ বিশ্বের বহু নামী রাষ্ট্রনেতার আতিথেয়তার সাক্ষী বহন করে চলেছে।