বিধানসভায় হাজিরা খাতায় সই হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগের কথা কি আদৌ পৌঁছচ্ছে বিধানসভার অলিন্দে? এই প্রশ্ন ঘিরেই এখন তোলপাড় তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহল। সম্প্রতি আরটিআই (RTI) মারফত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দলের বিধায়কদের কাজের খতিয়ান নেওয়া শুরু করেছে শীর্ষ নেতৃত্ব। আর সেই তথ্য সামনে আসতেই দেখা গিয়েছে এক চাঞ্চল্যকর চিত্র।
দলীয় সূত্রের খবর, গত পাঁচ বছরে তৃণমূলের ৫০ জনেরও বেশি বিধায়ক রয়েছেন, যাঁরা বিধানসভায় হাজির থাকলেও অধিবেশনে একটিও প্রশ্ন করেননি কিংবা কোনও আলোচনায় অংশ নেননি। অর্থাৎ, তাঁরা বিধানসভায় কার্যত ‘মৌনীবাবা’ সেজে বসেছিলেন। এই তালিকায় যেমন প্রভাবশালী রাজনৈতিক মুখ রয়েছেন, তেমনই নাম উঠে এসেছে বেশ কয়েকজন ‘তারকা’ বিধায়কেরও। মজার বিষয় হলো, এই তারকাদের অনেককেই টিভির পর্দায় টক-শো’তে সরব হতে দেখা গেলেও বিধানসভার অধিবেশনে তাঁদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়নি।
আগামী জানুয়ারি মাস থেকেই ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করতে চলেছে তৃণমূল। রাজ্যজুড়ে চলছে এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়া। এই আবহে বিধায়কদের এমন ‘নিষ্ক্রিয়তা’ ভালো চোখে দেখছে না দল। গত সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের সাংগঠনিক বৈঠক থেকে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, “এখন বেড়াতে যাওয়ার সময় নয়। আগে মানুষের পাশে দাঁড়ান, কাজ করুন। ছাব্বিশ জিতলে তবেই পিকনিক হবে।”
তবে এই অন্ধকারের মাঝেও আশার আলো দেখিয়েছেন কিছু জনপ্রতিনিধি। রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, উপনির্বাচনে জিতে আসা এক চিত্রতারকা বিধায়ক অল্প সময়ের মধ্যেই জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রশ্ন তুলে এবং আলোচনায় অংশ নিয়ে নজর কেড়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার নির্দেশ দিয়েছেন যে, বিধানসভা হলো মানুষের কথা বলার জায়গা, শুধু হাজিরা দেওয়ার জায়গা নয়। কিন্তু নেত্রীর সেই নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যাঁরা পাঁচ বছর নীরব থেকেছেন, তাঁদের তালিকা এখন আলাদা করে তৈরি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ২০২৬-এর প্রার্থী চয়নের ক্ষেত্রে এই ‘নিষ্ক্রিয়তা’ বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে।