‘বিদ্রোহী সত্ত্বা’ই পরিচয়! কংগ্রেস থেকে তৃণমূল, কেন বারবার সাসপেন্ড হয়েও দমে যাননি হুমায়ুন কবীর?

বৃহস্পতিবার সকালে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ফিরহাদ হাকিমের ঘোষণায় ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে সাসপেন্ড করার খবরটি রাজনৈতিক মহলের একাংশের কাছে প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ, বিদ্রোহ আর বিরোধিতা যেন বঙ্গ রাজনীতির এই চরিত্রটির অন্যতম পরিচিতি। মুখ্যমন্ত্রীর সভা চত্বরে সাংবাদিকদের কাছ থেকে সাসপেন্ড হওয়ার খবর শুনেই ক্ষুব্ধ হয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান হুমায়ুন।

প্রথম সাসপেনশন কংগ্রেসে:

শুরুটা কংগ্রেস থেকে: পেশায় ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবীর একসময় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন এবং অধীর চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০১১ সালে বাম-কংগ্রেস জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় তিনি প্রতিমন্ত্রী পদ পান।

বিদ্রোহের শুরু: পরে যখন জোট ভাঙে এবং হাইকমান্ডের নির্দেশে সাবিনা ইয়াসমিন, মানস ভুঁইয়ার মতো নেতারা পদত্যাগ করেন, তখনও ব্যতিক্রমী ছিলেন হুমায়ুন—তিনি পদত্যাগ করেননি।

প্রথম সাসপেনশন: ফলস্বরূপ, কংগ্রেস তাঁকে সাসপেন্ড করে। এরপর তিনি বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন।

২০১৫-তে তৃণমূলেও বিদ্রোহ:

নেত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খোলা: মাত্র তিন বছরের মধ্যেই তৃণমূলে তাঁর মোহভঙ্গ হয়। রেজিনগরের উপনির্বাচনে হেরে মন্ত্রীর পদ হারানোর পর তিনি দলের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেন।

অভিষেকের গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন: শুধু দল নয়, তিনি খোদ সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও মুখ খোলেন এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন।

দ্বিতীয় সাসপেনশন: সেই সময় তৎকালীন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক পার্থ চট্টোপাধ্যায় হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে সাসপেন্ড করার ঘোষণা করেন।

নির্দল প্রার্থী হিসেবে টক্কর:

ক্ষমতা প্রদর্শন: সাসপেন্ড হওয়ার পর নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনে তৎপর ছিলেন হুমায়ুন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়েন।

তৃণমূলকে টেক্কা: এই নির্বাচনে তিনি তৎকালীন কংগ্রেস বিধায়কের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হেরে গেলেও, মাত্র পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।

বিজেপিতে যোগ ও ফিরে আসা:

বিজেপিতে টিকিট: ২০১৬ সালের পর তৃণমূলের ফেরার রাস্তা বন্ধ থাকায়, ২০১৮ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন এবং আবারও ভোটে লড়েন। তবে এবার তিনি তৃতীয় স্থানে নেমে যান।

ফিরে আসা: দীর্ঘ ৬ বছর পর তিনি আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন এবং ২০২১ সালে ভরতপুর থেকে টিকিট পেয়ে জয়ী হন।

বর্তমান বিতর্ক:

আবার ভোটের আগে দলের বিরুদ্ধে বারবার মুখ খোলা এবং বাবরি মসজিদ তৈরির মতো ‘সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক’ মন্তব্য করার কারণে হুমায়ুনকে সাসপেন্ড করা হলো। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, ক্ষমতা পাওয়ার জন্য তিনি কোনও দলকেই তোয়াক্কা করেন না, নাকি তৃণমূলের সন্দেহ ঠিক—ভোটের আগে কেউ তাঁর এই বিদ্রোহী-সত্ত্বাকে কাজে লাগিয়ে ‘ডিভিশনাল পলিটিক্স’ করতে চাইছে?

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy