হিন্দু ধর্মে মৃত্যুর পরবর্তী প্রতিটি আচার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মনে করা হয়, যথাযথ পারলৌকিক কর্ম বা শ্রাদ্ধ না হলে আত্মা প্রেতযোনি থেকে মুক্তি পায় না। সাধারণত পুত্রই পিতার মুখাগ্নি বা শ্রাদ্ধের অধিকারী হয়, কিন্তু প্রশ্ন ওঠে যদি কেউ অবিবাহিত অবস্থায় মারা যান, তবে তাঁর পারলৌকিক ক্রিয়া কে সম্পন্ন করবেন? হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রামাণ্য গ্রন্থ ‘গরুড় পুরাণ’-এ এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
শাস্ত্র অনুযায়ী, কোনো অবিবাহিত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাঁর শ্রাদ্ধ করার প্রথম ও প্রধান অধিকার থাকে তাঁর পিতার। পুত্রকে জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্তি দিতে পিতাই তখন প্রধান কর্তার ভূমিকা পালন করেন। তবে পিতার অনুপস্থিতিতে বা তিনি অপারগ হলে, মৃতের ছোট বা বড় ভাই এই দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে পরিবারের কাকা বা জ্যাঠার ওপর এই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। যদি পরিবারে নিকট কোনো পুরুষ আত্মীয় না থাকেন, তবে বংশের যেকোনো পুরুষ সদস্য এই পবিত্র কাজ সম্পন্ন করতে পারেন।
গরুড় পুরাণে উল্লেখ আছে যে, অবিবাহিত মৃত্যু অনেক ক্ষেত্রে ‘অপূর্ণ জীবন’ হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষত যদি অকাল মৃত্যু ঘটে, তবে সাধারণ শ্রাদ্ধের পাশাপাশি ‘নারায়ণ বলি’ পুজোর বিধান দেওয়া হয়েছে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, গয়া বা হরিদ্বারে এই বিশেষ পুজো করলে অতৃপ্ত আত্মা প্রেতলোক থেকে মুক্তি পেয়ে পিতৃলোকে স্থান পায়। আত্মার মোক্ষ লাভের জন্য এই শাস্ত্রীয় নিয়মগুলি পালন করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করা হয়।