বয়স আশি ছুঁই ছুঁই, কিন্তু কণ্ঠে যেন তারুণ্য! এগরায় ‘এক ডাকে’ পরিচিত এই প্রবীণ সঙ্গীত গুরুকে আজও স্যালুট জানায় শ্রোতারা

আশি বছর বয়সেও তাঁর কণ্ঠস্বর আজও সতেজ, আবেগপূর্ণ এবং শক্ত। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরার বাসিন্দা প্রবীণ সঙ্গীত শিল্পী হেমন্ত মাইতি শুধুমাত্র একটি সংখ্যা দিয়ে তাঁর বয়সকে বেঁধে রাখেননি। আজও এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে সবার আগে ডাক পড়ে এই বহুমুখী প্রতিভার মানুষের।

এগরার গোপালপুর ইউনিয়ন রাখাল বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩৭ বছর শিক্ষকতা করেছেন হেমন্তবাবু। শিক্ষকতার পাশাপাশি গান রচনা, সুরারোপ এবং লেখালেখিতেও তিনি সমান পারদর্শী। এই বয়সেও তাঁর গানের উচ্ছ্বাস এতটুকুও কমেনি।

সাংস্কৃতিক পরিচিতি: স্থানীয়রা তাঁকে ‘এক ডাকে’ চেনেন। সম্প্রতি প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে তিনি মহকুমা শাসককে মুগ্ধ করেন এবং পুরস্কারও জেতেন। তিনি শুধু একজন শিল্পীই নন, এলাকার কচিকাঁচাদের ‘সংগীতগুরু’ হিসেবেও সম্মানিত। শিক্ষকতার পাশাপাশি গোপালপুরে তিনি একটি সংগীত স্কুলও শুরু করেছিলেন এবং বর্তমানে বাড়িতেই ছোটদের গান শেখানো চালিয়ে যাচ্ছেন। কোথাও অনুষ্ঠান থাকলে তিনি হাতে হারমোনিয়াম নিয়ে পৌঁছে যান।

সংগ্রামের জীবন: তবে হেমন্ত মাইতির শিল্পী হয়ে ওঠার পথটি সহজ ছিল না। তিনি একটি সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান। ছোটবেলায় পড়াশোনার সুযোগ কম ছিল। ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করার পরেও সংসারের অভাবের কারণে তাঁর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় এবং তাঁকে মাঠে কাজ করতে নামতে হয়। জীবনের সেই কঠিন সময়েও তিনি গান ও পড়াশোনার প্রতি টান ধরে রেখেছিলেন। এলাকার এক শিক্ষকের বদান্যতায় তিনি পুনরায় স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই তাঁর উত্থানের পথ শুরু হয়।

গান, গল্প ও কবিতা—হেমন্ত মাইতির কলমে ছোট ছোট জীবনের ছবি উঠে আসে। আশি বছর বয়সেও তিনি লেখালেখি করে চলেছেন অবিরাম। এলাকার সংস্কৃতি মানচিত্রে তিনি আজ এক উজ্জ্বল মুখ, যাঁর গানের জাদুতে মুগ্ধ হন সকল শ্রোতা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy