শারীরিক সীমাবদ্ধতা যে মানুষের ইচ্ছাশক্তির কাছে সামান্য খড়কুটোর মতো উড়ে যেতে পারে, তা আরও একবার প্রমাণ করলেন উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের অকুতোভয় তরুণ মানবেন্দ্র সিং। জন্মের পর যাঁর হাত দিয়ে পেনসিল ধরা নিয়েই চিকিৎসকদের সংশয় ছিল, সেই বিশেষ ভাবে সক্ষম যুবকই আজ ইউপিএসসি–আইইএস (UPSC-IES) পরীক্ষায় সর্বভারতীয় ১১২তম র্যাঙ্ক করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কোনো কোটা নয়, বরং সাধারণ বিভাগ থেকেই এই অসামান্য কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তিনি।
নেপথ্যে এক মায়ের মরণপণ লড়াই: মানবেন্দ্রর এই সাফল্যের কারিগর তাঁর মা রেণু সিং। পেশায় স্কুলের অধ্যক্ষ রেণু দেবী মানবেন্দ্রর ছোটবেলায় তাঁর বাবার অকালপ্রয়াণের পর একা হাতেই সংসারের হাল ধরেন। আর্থিক অনটন আর ছেলের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা— দুইয়ের বিরুদ্ধেই ছিল তাঁর যুদ্ধ। রেণু দেবী জানান, মানবেন্দ্র প্রথম দিকে হাত দিয়ে পেনসিল পর্যন্ত ধরতে পারত না। দিনের পর দিন পরম ধৈর্য ধরে ছেলের আঙুল ধরে তাকে লিখতে শিখিয়েছেন তিনি। আজ ছেলের এই আকাশছোঁয়া সাফল্যে দু’চোখ বেয়ে নামছে আনন্দের অশ্রু।
স্বপ্ন থেকে সাফল্যে উত্তরণ: মানবেন্দ্র পড়াশোনাতেও বরাবরই মেধাবী। খালসা পাবলিক স্কুল ও মডার্ন পাবলিক স্কুল থেকে কৃতীত্বের সঙ্গে পাশ করার পর তিনি জেইই অ্যাডভান্সডে (JEE Advanced) সর্বভারতীয় ৬৩তম র্যাঙ্ক অর্জন করেন। এরপর আইআইটি পটনা থেকে বিটেক সম্পন্ন করে লক্ষ্য স্থির করেন ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস বা আইইএস-এ। কঠোর পরিশ্রমের পর এল সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।
মানবেন্দ্রর কথায়, “শারীরিক কোনো সীমাবদ্ধতাই সাফল্যের পথে দেওয়াল হতে পারে না, যদি ইচ্ছাশক্তি ঠিক থাকে।” বুলন্দশহরের অলিগলি থেকে আজ তাঁর নাম সারা দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম।