একটা সময় ছিল, গ্রামবাংলার জীবনযাত্রা মানেই ছিল চাষের জমি, লাঙল আর তার অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী গরুর গাড়ি ও মোষের গাড়ি। কৃষকের সুখ-দুঃখ, ফসল তোলা থেকে শুরু করে পথ চলা—সবকিছুর সঙ্গে এই ঐতিহ্যবাহী যানগুলি ছিল ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। এদের চাকার শব্দেই যেন শুরু হত দিনের কাজ, যা ছিল গ্রামজীবনের এক চেনা সুর।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ছোঁয়া লেগেছে কৃষিক্ষেত্রে। লাঙলের স্থান দখল করেছে ট্র্যাক্টর, আর পণ্য পরিবহনে এসেছে ছোট-বড় ভ্যান, ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান। দ্রুতগতির আধুনিকতার কাছে যেন এই ধীরগতির ঐতিহ্যবাহী যানগুলি মূল্যহীন হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়তো এই যানগুলি চোখেও দেখেনি, ব্যবহার তো দূরের কথা।
তবুও বিস্ময়করভাবে, পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার বুকে আজও এই চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যায়নি! আধুনিকতার প্রবল স্রোতের মাঝেও কিছু পরিবার গর্বের সঙ্গে ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার তাগিদে আজও ব্যবহার করেন গরুর গাড়ি ও মোষের গাড়ি। কখনও মালপত্র বহন, কখনও খামারের কাজে—এই যানগুলি এখনও চন্দ্রকোনার রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ায়।
পুরনো দিনের মানুষদের কাছে এই যানগুলি শুধু একটি পরিবহণ মাধ্যম নয়, এগুলি হলো গ্রামবাংলার শেকড়, কৃষিকুলের অমূল্য স্মৃতি আর ইতিহাসের উত্তরাধিকার। চন্দ্রকোনার এই দৃশ্য আজও মনে করিয়ে দেয়, মাটির টান এবং ঐতিহ্যের প্রতি মানুষের আবেগ কখনও পুরোপুরি হারিয়ে যায় না, তা আধুনিকতার বেড়াজাল ভেদ করেও তার নিজস্ব পরিচয় ধরে রাখে।