জলসঙ্কট চরমে, রাজধানী তেহরান সরিয়ে নেওয়ার পথে ইরান! স্যাটেলাইট চিত্রে ধরা পড়ল ভয়ঙ্কর খরা

ব্যক্তিগত সুখ-শান্তি বা সমৃদ্ধির জন্য নয়, ইরানের মসজিদে মসজিদে এই মুহূর্তে চলছে একটাই প্রার্থনা—আকাশ থেকে নেমে আসুক কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি। সেখানে জলসঙ্কট ক্রমশ এতটাই তীব্র হচ্ছে যে, রাজধানী তেহরান (Tehran) অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুতর পরিকল্পনা চলছে। স্যাটেলাইটের তোলা ছবিতেও ইরানের এই তীব্র জলসঙ্কট ধরা পড়েছে।

প্রেসিডেন্টের কড়া সতর্কতা: ‘তেহরান খালি করে দিতে হবে’
ইরানের রাজধানী তেহরানে দেড় কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস, আর সেখানেই জলসঙ্কট সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই খরা চললে, শীঘ্রই তেহরান আর বসবাসযোগ্য থাকবে না।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান (Masoud Pezeshkian) নভেম্বরে নাগরিকদের সতর্ক করে জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে বর্ষার আগমন না ঘটলে সরকারকে দৈনিক জল খরচের মাত্রা বেঁধে দিতে হবে। এর পরও সঙ্কট না কমলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাবে:

“জল খরচ বেঁধে দেওয়ার পরও যদি বৃষ্টি না হয়, সেক্ষেত্রে জলই থাকবে না আর। তাহলে তেহরান খালি করে দিতে হবে নাগরিকদের।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরিস্থিতি না পাল্টালে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া সরকারের কাছে আর উপায় থাকবে না।

কেন এমন চরম অবস্থা? বাঁধগুলিতে জল তলানিতে
তেহরানের এই করুণ দশার নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ—লাগামছাড়া সম্প্রসারণ, কৃষি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জলের ব্যবহার এবং অনাবৃষ্টি।

জলাধারের অবস্থা: তেহরানে জল সরবরাহ করা প্রধান জলাধারে এই মুহূর্তে মাত্র ১১ শতাংশ জল পড়ে রয়েছে। তেহরানের উপকণ্ঠে লাটিয়ান বাঁধ এবং উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত আমির কবীর বাঁধগুলিতে যথাক্রমে ৯ শতাংশ এবং ৮ শতাংশ জল পড়ে রয়েছে। ইরানের বৃহত্তম শহর মাশাদের জনসংখ্যা ৩০ লক্ষ, সেখানকার জলাধারে মাত্র ৩ শতাংশ জল আছে।

লাগামছাড়া সম্প্রসারণ: শিক্ষা ও জীবিকার সন্ধানে গ্রাম্য এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ রাজধানীতে ভিড় করেছে, ফলে জলের চাহিদা বেড়েছে।

অত্যধিক ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন: ভর্তুকিযুক্ত জল ও শক্তির ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনের জন্য নিবিড় সেচ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীলতার কারণে মাটির নীচ থেকে অত্যধিক মাত্রায় জল তোলা হচ্ছে।

পরিকাঠামোগত ত্রুটি: শহরাঞ্চলে পানীয় জলের প্রায় ৩০ শতাংশ পুরনো, জীর্ণ পাইপলাইন থেকে চুঁইয়ে পড়ে নষ্ট হয়।

খরা ও জলবায়ু পরিবর্তন
১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকেই ইরান খাদ্যে আত্মনির্ভর হতে পর পর বাঁধ তৈরি করে এবং নদীর অভিমুখ শহরের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। এর ফলে হ্রদগুলি শুকিয়ে যায় এবং ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমে যেতে শুরু করে। পাশাপাশি, ২০২০ সাল থেকে ইরানে অস্বাভাবিক রকম কম বৃষ্টি হচ্ছে। ১৯৭৭ সালের পর ২০২৫ সালটি ছিল ইরানের জন্য উষ্ণতম বছর। এই নিয়ে পর পর ষষ্ঠ বছর খরা দেখা দিয়েছে দেশটিতে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy