বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দল ও সাধারণ মানুষ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দ্রুত দেশে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছেন। এরই মধ্যে খালেদাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে এবং পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান বাংলাদেশে আসছেন। কিন্তু কেন তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
আমেরিকার হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মির্জা গালিব (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের প্রাক্তন সভাপতি) বলেছেন, তারেক রহমান কেন দেশে আসতে পারছেন না, তার বিস্তারিত দেশবাসীকে জানানো উচিত।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে লিখেছেন, তারেক রহমানের ফেরা নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো বিধি-নিষেধ বা আপত্তি নেই। তিনি আরও লেখেন যে তারেক দ্রুতই দেশে ফিরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন এবং তার দলের নেতারা নভেম্বরেই দেশে ফেরার কথা বলেছিলেন।
নভেম্বর শেষ হওয়ার মাত্র এক দিন আগে মি. রহমান নিজেই জানান যে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ন্ত্রণ তার নেই। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশে বড় দুটি দলের (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে একটি অগণতান্ত্রিক তৎপরতা চলছে এবং দুই দলেরই নেতৃত্ব পরিবর্তনে ‘বিদেশ থেকে একটা খেলা চলছে’।
যদিও বিএনপির কোনও নেতাই প্রকাশ্যে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য শুধু তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে বলেছেন, “দলের বিষয় আছে। পাশাপাশি আরও অনেক বিষয় আছে। সব মিলিয়েই তার দেশে ফিরতে বিলম্ব হচ্ছে।” তবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল হলে ‘পরিস্থিতি যাই হোক’ তিনি দেশে ফিরবেন—এমন আভাসও দিয়েছেন দলের নেতারা।
সংকটকালে তারেক কেন নীরব? ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পরিবারসহ লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছিলেন তারেক রহমান। এরপর ২০১৮ সালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বীকার করেন, ২০১২ সালে তারেক ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন, যা এক বছরের মধ্যেই গৃহীত হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৫ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি কেন দেশে ফিরছেন না—এই প্রশ্ন ও কৌতূহল ক্রমেই জোরালো হচ্ছিল। বিশেষ করে গত রবিবার জরুরি ভিত্তিতে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তির পরপরই তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই মায়ের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য তারেক রহমানের প্রতি অনুরোধ জানাতে দেখা গেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে শনিবার সকালে বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যে কোনেও সন্তানের মতো তারও আছে। কিন্তু অন্য আর সকলের মতো সেটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাঁর একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। স্পর্শকাতর সেই বিষয় বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত। রাজনৈতিক বাস্তবতার সেই পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে উপনীত হওয়া মাত্রই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে তার সুদীর্ঘ উদ্বিগ্ন প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলেই তার পরিবার আশাবাদী।”