ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে মমতা সরকারের ‘U-টার্ন’! কেন কেন্দ্রীয় পোর্টালে তথ্য আপলোডে সম্মতি?

কেন্দ্রীয় সরকারের ‘উমিদ’ (UMID) পোর্টালে রাজ্যের ওয়াকফ সম্পত্তিগুলির তথ্য নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে বড়সড়ো অবস্থান বদল করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। প্রথমে এই কেন্দ্রীয় আইন কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নিলেও, সম্প্রতি রাজ্য সংখ্যালঘু বিষয়ক দপ্তর জেলাগুলিতে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানিয়েছে যে, ওয়াকফ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য পোর্টালে আপলোড করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট ওয়াকফ আইন বলবৎ করার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে রাজি না হওয়ার পরই এই সিদ্ধান্ত এসেছে।

🔥 ৫ ডিসেম্বরের সময়সীমা, বিপুল সম্পত্তির ভার
কেন্দ্রীয় সরকার ছয় মাস আগে এই সংক্রান্ত নির্দেশ জারি করেছিল, যার সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৫ ডিসেম্বর। পশ্চিমবঙ্গের আট হাজারের বেশি ওয়াকফ এস্টেট-সহ মোট ৮২ হাজার ৬০০-র বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রতিটি সম্পত্তির (যেমন— কোন বছরে ওয়াকফের অধীনে এসেছে, তার এলাকা, রক্ষণাবেক্ষণকারী, মূল্য ইত্যাদি) সমস্ত তথ্য পোর্টালে আপলোড করা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ।

রাজ্যের মন্ত্রী ও জমিয়তে উলেমা ইন হিন্দের রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সময়সীমা বাড়ানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লেখার দাবি জানিয়েছেন।

⚠️ উত্তপ্ত ভাঙড়: বিক্ষোভ-সহিংসতা
রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় উত্তপ্ত হয়েছে ভাঙড়। জঙ্গিপুর ও সুতির পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়েও ওয়াকফ আইন বিরোধী বিক্ষোভ সহিংস আকার ধারণ করে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়ি ও বাইক ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। সিসিটিভি ক্যামেরাও ভেঙে দেওয়া হয়। বাসন্তী হাইওয়েতে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভকারীদের আটকানোর চেষ্টা করলে লাঠিচার্জ ও পাল্টা ইটবৃষ্টি হয়। আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী এই সহিংসতার নিন্দা করে আইন নিজের হাতে না নেওয়ার আহ্বান জানান। স্থানীয় প্রশাসন শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে।

💡 রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও ভোট সমীকরণ
ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর তীব্র। তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, এই আইন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার লক্ষ্যে আনা হয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপির দাবি, জমি মাফিয়াদের হাত থেকে মুসলমানদের সম্পত্তি রক্ষা করতেই নথিভুক্তিকরণের প্রয়োজন।

আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী রাজ্যের এত দেরিতে অবস্থান বদলের তীব্র সমালোচনা করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইনি জটিলতা এড়াতেই রাজ্য সরকার শেষমেশ কেন্দ্রীয় আইন মেনে নিয়েছে। তবে, সাধারণ মুসলমান ভোটারদের কাছে ওয়াকফ ইস্যুর চেয়ে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) এবং সরকারি প্রকল্পের সুবিধা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই সিদ্ধান্তে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে বড়সড় প্রভাব পড়বে না বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy