সোমবার নবান্ন সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে রাজ্য সরকারের উন্নয়নের উপর থিম সং গাওয়ার পর থেকেই কটাক্ষের শিকার হয়েছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়িকা ইমন চক্রবর্তী। এই গান প্রকাশ্যে আসার পর তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে কিছু তীর্যক মন্তব্য ধেয়ে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে TV9 বাংলার প্রশ্নের উত্তরে মুখ খুলেছেন গায়িকা।
রাজনীতি নয়, মানবিকতা দেখলেন ইমন
ইমন চক্রবর্তী স্পষ্ট করেন যে তিনি রাজনীতির মানুষ নন। তিনি জানান, গান গাওয়ার জন্য তাঁর কাছে ফোন আসে এবং গানের কথা ও সুর পাঠানো হয়।
“আমি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, বেশ কিছু বছর ধরে রাজনীতির থেকে একেবারে দূরে থাকি। আমি রাজনীতির মঞ্চের মানুষ নই,” বলেন ইমন।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও মানবিক। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ডেকে কিছু ব্যক্তিগত কথা বলেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাবা-মায়ের কথা বলেন।
তাঁদের বাড়িতে থাকা একটি হারমোনিয়ামের কথা বলেন, যা দিদি বাবা মারা যাওয়ার পর বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
এই ব্যক্তিগত কথা শুনেই ইমন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। গায়িকা বলেন, “আমি ওঁর মানবিক দিকটা দেখতে পেলাম আবার। এই কথাগুলো বলছি বলে, কেউ আমাকে ব্যঙ্গ করতে পারেন, তাতে আমার কিছু আসে যায় না।”
মুখ্যমন্ত্রীর সম্মান ও ইমনের কৃতজ্ঞতা
ইমনের কাছে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল সম্মান। তিনি জানান, গানটি গাওয়ার পর:
“মুখ্যমন্ত্রী উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে সম্মান জানিয়েছেন। ওখানে উপস্থিত যাবতীয় নামী ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে একইভাবে আমাকে সম্মান জানিয়েছেন। এরকম করে কেউ আগে আমাকে সম্মান জানাননি। তাই আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিরনত হয়ে থাকব, এই সম্মানটা দেখানোর জন্য।”
একজন নারী শিল্পী হিসেবে তাঁকে কর্মজীবনে যে বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে ইমন বলেন, আজকে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে যে সম্মান দিয়েছেন, তাতে তাঁর হয়ে তিনি যেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে জবাব দিয়েছেন।
কটাক্ষে গুরুত্ব দিতে নারাজ গায়িকা
কিছু শিল্পী এই নিয়ে কটাক্ষ করছেন, সে বিষয়ে খারাপ লাগলেও ইমন সেসব মন্তব্যে গুরুত্ব দিতে নারাজ।
“আমাকে যদি কেউ সম্মান করেন, সেটা কি আমি হেলায় হারাবো? অন্য শিল্পীরা যদি এই ডাকটা আসত, তাঁরা কি যেতেন না?”—পাল্টা প্রশ্ন করেন ইমন।
তিনি আরও স্পষ্ট করেন, তাঁকে নিয়ে কেউ যদি বলেন, “তৃণমূল বা আমি বিক্রি হয়ে গিয়েছি, সেগুলো তাঁদের বক্তব্য। আমার জবাব দেওয়ার কিছু নেই।”
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ৪৫ মিনিটের ব্যক্তিগত আলাপে রাজনীতি সংক্রান্ত কোনো প্রসঙ্গ উত্থাপন হয়নি। তিনি একজন শিল্পী হিসাবে যে সম্মান পেয়েছেন, তাতেই আপ্লুত।