বাবা হতে চলেছেন? সন্তান লালনপালনে কিছু বিষয় জানা উচিত বাবাদেরও

আজকাল সন্তান লালনপালন কীভাবে করবেন তা নিয়ে বাবা-মাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। ডাক্তার, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য, বন্ধুবান্ধব, বইপুস্তক আর ইন্টারনেটে এসব নিয়ে রয়েছে নানা রকম প্রচলিত ও আধুনিক পরামর্শ।

এত এত পরামর্শের ভিড়ে কোনটা গ্রহণ করবেন আর কোনটা করবেন না তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েন অভিভাবকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এমিলি ওস্টার যখন গর্ভবতী ছিলেন, তিনি খুবই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন কোনটি তার সন্তানের জন্য ভালো।

এ জন্য তিনি সন্তানপালন নিয়ে যত ধরনের পরিসংখ্যান গবেষণা পাওয়া যায়, সব ঘেঁটে তিনি বিশ্লষণ করে দেখেছেন।

সম্প্রতি অর্থনীতির এই অধ্যাপক একটি বই লিখেছেন, এর মূল বিষয় সন্তান লান পালন। তিনি মোট ১৩টি পরামর্শ দিয়েছেন যা সব মা-বাবার জানা উচিত। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে সেই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে-

১. বুকের দুধ স্বল্প মেয়াদে শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এমন অনেক তথ্য উপাত্ত রয়েছে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুরা বুকের দুধ খায় তারা বিশেষ করে অ্যালার্জি, পেটের সমস্যা এবং কানে সংক্রমণের মতো সমস্যায় কম পড়ে।

কিন্তু বুকের দুধের দীর্ঘমেয়াদি উপকারিতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য গবেষকদের কাছে নেই।

অর্থাৎ যাদের বুকের দুধ দেওয়া হয়েছে ছোটবেলায়, বড় হলে তারা বেশি স্মার্ট হবে অথবা তারা স্থূল হবে না, কিংবা তাদের ডায়াবেটিস বা ক্যানসারের ঝুঁকি কম হবে এমন কোনো উপকারিতার কথা শোনা যায়নি।

তবে, সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে মায়ের কিছু ধরণের ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

২. সন্তানকে বুকের দুধ দেওয়া হয় যে সময়, সেই কয়েক মাস বা বছর মা অ্যালকোহল পান করতে পারবেন না, এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে।

অধ্যাপক ওস্টার বলেছেন, মা সেই সময় অ্যালকোহল পান করলে, রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ যা থাকে সেই একই পরিমাণ থাকবে বুকের দুধেও।

ফলে শিশু দুধের সঙ্গে অ্যালকোহল পান করলেও, তা পরিমাণে অত্যন্ত কম।

তবে, কোন মা যদি সন্তানকে সেই সামান্য পরিমাণে অ্যালকোহলও দিতে না চান, তাহলে পান করার দুই ঘণ্টা পরে সন্তানকে দুধ দিতে হবে।

৩. চিকিৎসকের পরামর্শে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েরা বিষণ্নতারোধী ওষুধ খেতে পারবেন।

এ ধরনের ওষুধের কোনো ক্ষতিকর প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে না।

যদিও বুকের দুধ খাওয়ানোর মধ্যদিয়ে প্রাকৃতিকভাবেই বিষণ্নতা কমে বলে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে।

৪. আমেরিকার শিশু বিশেষজ্ঞদের সংগঠনের পরামর্শ হচ্ছে, জন্মের পর নিদেনপক্ষে প্রথম ছয়মাস থেকে এক বছর যেন তারা মা-বাবার সঙ্গে একই ঘরে থাকে।

এর ফলে নবজাতক শিশুদের হঠাৎ মৃত্যুর হার রোধ করা সম্ভব।

কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন, একই ঘরে থাকার সুবিধা অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই ফুরিয়ে যায়।

৫. অনেক প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মানুষেরা এখনো ঘুমন্ত সন্তানকে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে শক্ত করে বুকের কাছে বেঁধে রাখেন।

গবেষণায় দেখা গেছে এটা শিশুদের জন্য ভালো, এর ফলে শিশু ভয় পেয়ে কেঁদে ওঠে না, এবং শিশুর ঘুম ভালো হয়।

তবে বুকের কাছে বেঁধে রাখার সময় শিশু যেন তার কোমর এবং পশ্চাৎদেশ ঠিকমত নড়াচড়া করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

৬. গবেষণায় দেখা গেছে প্রাপ্তবয়স্ক কোন মানুষের সঙ্গে শিশুরা সোফায় বা যেকোন জায়গায় ঘুমিয়ে পড়লে শিশু মৃত্যুর হার ২০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

অনেক সময় অসচেতনতার কারণে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরের নিচে চাপা পড়তে পারে বাচ্চারা।

ফলে এটি একেবারেই করা যাবে না বলে নিষেধ করছেন অধ্যাপক ওস্টার।

৭. যদিও সন্তান জন্মের পরবর্তী ছয় সপ্তাহ শারীরিক সম্পর্কে যাওয়া উচিত নয় এমন একটি প্রচলিত ধারণা আছে।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে এর জন্য কোনো আদর্শ সময় নেই। নির্ভর করবে মায়ের শারীরিক অবস্থার ওপর।

৮. সন্তানকে প্রয়োজনীয় সব টিকা অবশ্যই দিতে হবে। সেই সঙ্গে নিজের সুস্থতার জন্যও প্রয়োজনীয় টিকা ও অন্যান্য চিকিৎসা নিতে হবে।

৯. বাচ্চাকে কি ঘুমের প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত কিনা- এ সংক্রান্ত কয়েকশ গবেষণা ঘেঁটে অধ্যাপক ওস্টার এ সিদ্ধান্ত পৌঁছেছেন যে, বাচ্চাদের খুব অল্প বয়সেই ঘুমের একটি প্যাটার্ন ঠিক করা উচিত।

তাহলে তাদের বাকী কাজ অর্থাৎ খাওয়া ও হজম প্রক্রিয়াও একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চলবে।

১০. অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মের পর শিশুদের কিছু সময় মায়ের সঙ্গে একান্তে কাটানো প্রয়োজন।

ফলে একজন মায়ের মাতৃত্ব-কালীন ছুটি নেয়ার ফলে সন্তান উপকৃত হয়।

১১. দিবাযত্ন বা ডে-কেয়ারে থাকলে কি মায়ের সঙ্গে কম খাতির থাকে- এমন কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই। তবে সন্তানের সঙ্গে কাটানো সময় কীভাবে কাটাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে মায়ের সঙ্গে বাচ্চার কেমন খাতির থাকবে।

১২. তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা টিভি দেখে অনেক কিছু শিখতে পারে।

তবে, টিভি দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের চোখের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন মনে করেন কোনো কোনো চিকিৎসক।

১৩. শিশুদের কোনো বই থেকে পড়ে শোনানোর পর, তাদেরকে সে নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন করা যেতে পারে, এতে তাদের উপকার হয়। বাচ্চাদের চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy