ফ্যাটি লিভারের রোগীরা কোন কোন খাবার খাবেন ও কি খাবেন না, দেখুন অবশ্যই

ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় বর্তমানে অনেকেই ভুগছেন। অনেকটা নীরবেই লিভারকে অকেজো করে দেয় এই অসুখ। অনিয়মিত জীবনযাপন ও অতিরিক্ত ওজনের কারণে অনেকেই ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হন। প্রাথমিক অবস্থায় ফ্যাটি লিভার ধরা পড়লে দ্রুত প্রতিরোধ করা সম্ভব।

শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে ফ্যাটি লিভার হানা দেয়। ফ্যাটি লিভারের কারণে শরীর থেকে টক্সিন ভালো করে বের হতে পারে না। তাই ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হলে খাদ্যতালিকা বদলে ফেলতে হবে।

অ্যালকোহলিক কিংবা নন অ্যালকোহলিত ফ্যাটি লিভারই হোক না কেন, এমন রোগীদের সুস্থ হতে খাদ্য ও ব্যায়ামের প্রতি সঠিক নজর রাখতে হবে।

বিশেষ করে কিছু খাবার আছে যেগুলো বর্জন করতে হবে ও খাদ্যতালিকায় বেশ কিছু খাবার যুক্ত করতে হবে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক কি কি খাওয়া উচিত আর কি খাবেন না-

যেহেতু প্রতিটি মানুষই আলাদা, তাই একেকজনের খাবারের পরিকল্পনাও ভিন্ন হওয়া উচিত। তবে ফ্যাটি লিভারে যারা ভুগছেন তাদের লিভারের চর্বি দূর করতে স্বাস্থ্যকর চর্বি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করতে হবে।

>> মাছ ও সি ফুড, ফল, আস্ত শস্যদানা, বাদাম, জলপাই তেল, শাকসবজি, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি খাবার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করুন। ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীর শরীর ইনসুলিন তৈরি করে তা ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ফলে রক্তে গ্লুকোজ জমা হয় ও লিভার সেটিকে চর্বিতে পরিণত করে।

এ কারণে স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণের মাধ্যমে শরীর ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারবে সহজেই। অর্থাৎ শরীরের কোষগুলো গ্লুকোজ গ্রহণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে আপনার লিভারের চর্বি তৈরি ও সঞ্চয়ের প্রয়োজন নেই।

স্বাস্থ্যকর চর্বি পাওয়া যায়- ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, মাছ, মাছের তেল, উদ্ভিজ্জ তেল, বাদাম (বিশেষ করে আখরোট), তিসি, তিসি তেল ও পাতাযুক্ত সবজিতে।

>> লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব জরুরি। যখন শরীর পুষ্টিগুলো সঠিকভাবে ভাঙতে না পারে তখন কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে লিভারে চর্বি তৈরি করতে পারে।

তবে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট নামে পরিচিত যৌগগুলো কোষকে এই ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। ব্ল্যাক কফি, সবুজ চা, রসুন, বিভিন্ন ফল, শাক সবজিসহ ভিটামিন ই জাতীয় খাবার, সূর্যমুখীর বীজ, কাজু বাদামে থাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।

>> ভিটামিন ডি ফ্যাটি লিভার রোগে জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন ডি পেতে নিয়মিত রোদ পোহাতে হবে। কিছু দুগ্ধজাত খাবারেও পেতে পারেন এই ভিটামিন।

>> অন্যদিকে পটাসিয়ামও নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যা সারায়। তাই খাদ্যতালিকায় রাখুন স্যামন ও সার্ডিনের মতো মাছ। এ ছাড়াও ব্রকোলি, মটর, মিষ্টি আলু, কলা, কিউই ও অ্যাপ্রিকটের মতো ফলসহ কিছু সবজিতেও থাকে পটাসিয়াম। দুধ ও দইয়ের মতো দুগ্ধজাত খাবারেও পটাসিয়াম বেশি থাকে।

কী কী খাবেন না?

>> অন্যদিকে জলপাই, বাদাম ও অ্যাভোকাডোতে থাকে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট। যা লিভারে আরও চর্বি জমায়। এ ধরনের খাবারের মধ্যে আছে- পূর্ণ চর্বিযুক্ত পনির, দই, কম চর্বি ছাড়া, লাল মাংস, পাম বা নারকেল তেল দিয়ে তৈরি বেকড পণ্য ও ভাজা খাবার।

একই সঙ্গে মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন- ক্যান্ডি, সোডা ও উচ্চ-ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপসহ শর্করাজাতীয় খাবার লিভারের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়।

>> মদ্যপানের কারণে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এই রোগে আক্রান্ত হলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে।

মনে রাখতে হবে, শরীরের ওজনের মাত্র ৫ শতাংশ কমালেই লিভারের চর্বি দ্রুত কমে যায়। তবে ধীরে ধীরে ওজন কমাতে হবে। প্রতি সপ্তাহে ১-২ পাউন্ডের বেশি ওজন কমানো উচিত নয়। দ্রুত ওজন কমাতে গেলে আবার লিভারে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

লিভার সুস্থ রাখতে ব্যায়াম করাও জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে কমপক্ষে ৫ দিন অন্তত ৩০-৬০ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে শরীরচর্চা করুন। একই সঙ্গে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পাশাপাশি কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডও নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

Related Posts

© 2024 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy