শিশুকে সুস্থভাবে জন্মদানের পর অনেক মা ভাবেন কঠিন একটি ধাপ পার করেছেন তারা। দ্বিমত করার সুযোগ নেই। তবে জন্মের পর নবজাতককে যত্ন সহকারে লালন-পালন করাও কম চ্যালেঞ্জের নয়। প্রথমবার হলে তো মনে নানা প্রশ্ন জমা হয়। পরিবারের অভিজ্ঞ সদস্যদের সাহায্য নিয়ে সামনে এগোতে হয়।
এ সময়টাতে মা শারীরিক এবং মানসিকভাবে দুর্বল থাকে। এ কারণে নবজাতক ও মায়ের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হয়।
নবজাতকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেকে কিছু না কিছু ভুল করে থাকেন। সেগুলোই তুলে ধরেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া-
নিয়মিত ডায়াপার পরিবর্তন না করা: ৩-৪ ঘণ্টা পর পর শিশুর ডায়াপার পরিবর্তন করে দেওয়া উচিত। ভেজা ডায়াপারে শিশুর অস্বস্তি লাগতে পারে। এটি ত্বকের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। যদি কাপড়ের ডায়াপার শিশুকে পরান তাহলে একবার ভেজার পরই তা দ্রুত পরিবর্তন করুন।
প্রতিদিন স্নান করানো: নবজাতককে সপ্তাহে দুই দিন স্নান করানো উচিত। প্রতিদিন স্নান করানোর ফলে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। প্রতিদিন স্নান না করিয়ে শিশুর শরীর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে পারেন।
নাড়ির যত্ন না নেওয়া: নবজাতকের নাড়ি খুবই স্পর্শকাতর জায়গা। প্রথম প্রথম এটাকে স্পর্শ করা ভীতিকর মনে হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে শিশুর নাড়ি পরিষ্কার ও শুকনো অবস্থায় আছে কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে। আলো-বাতাসের সংস্পর্শে থাকে এমন অবস্থায় রাখতে হবে। কখনোই ডায়াপার দিয়ে নাড়ি ঢেকে দেবেন না। ডায়াপারের মাধ্যমে নাড়িতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হতে পারে। নাড়ি পড়তে সাধারণত ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগে।
নাড়ি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে নাড়িতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসলে যেমন- লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া, দুর্গন্ধ হলে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
বেশি গরম বা ঠান্ডা জলে স্নান করানো: শিশুকে সব সময় কুসুম গরম জলে স্নান করানো উচিত। বেশি গরম বা ঠান্ডা জলে স্নান শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। গামলার ২-৩ ইঞ্চি উচ্চতায় জল রাখতে হবে। জলে বেশিক্ষণ শিশুকে রাখবেন না। ভালোভাবে নরম কাপড় দিয়ে শিশুর ভেজা শরীর মুছে দিতে হবে।
সঠিকভাবে ডায়াপার না পরানো: শিশুর ত্বকে র্যাশ দেখা দেওয়ার পেছনের কারণ হলো ডায়াপার সঠিকভাবে না লাগানো। ডায়াপার শক্ত করে পরানোর ফলে বাতাস ঢুকতে না পেরে ত্বকে র্যাশ দেখা দেয়। একেবারে ঢিল করে পরালেও খুলে যেতে পারে।
স্নানের পর চুল না শুকানো: নবজাতকের স্পর্শকাতর জায়গাগুলো সব সময় শুষ্ক রাখতে হবে। স্নান করানোর পর অবশ্যই শিশুর চুল প্রথমে শুকিয়ে নিতে হবে। নরম টাওয়েল দিয়ে চুল শুকনো করতে হবে।
বেবি সাবান ও অন্যান্য প্রোডাক্ট অতিমাত্রায় ব্যবহার: শিশুর ত্বক অনেক কোমল ও স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। ত্বক পরিষ্কারের জন্য সাবানের কোনো প্রয়োজন নেই। অনেক ধরনের ত্বকের যত্নের প্রোডাক্ট ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। ছোট্ট একটি বেবি ময়েশ্চারাইজার আর বেবি সোপই যথেষ্ট।
মাড়ি পরিষ্কার না করা: দাঁতের মতো শিশুদের মাড়ি থেকে যদিও দুর্গন্ধ বের হয় না, তার মানে এই নয় যে মাড়িতে জীবাণু নেই। শিশুকে খাওয়ানোর পর তার মাড়ি অবশ্যই মুছে দিতে হবে।
শিশুর মুখ পরিষ্কারের জন্য ভেজা গজ ব্যবহার করতে হবে। প্রতিদিন দুইবার এই কাজটি করতে হবে। তবে শিশুকে প্রতিবার খাওয়ার পর মুখ পরিষ্কার করতে পারেন।
নিয়মিত শিশুর নখ না কাটা: শিশুর নখ দ্রুত লম্বা হয়। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার শিশুর নখ কেটে দিতে হবে। এজন্য বেবি নেইল কাটার ব্যবহার করা উচিত। শিশু ঘুমিয়ে পড়লে নখ কেটে দিতে হবে।
কানের নালি পরিষ্কার করা: শিশুর কানের নালিতে কোনো কিছু ঢুকিয়ে পরিষ্কার করার দরকার নেই। কেবল স্নানের সময় কানের বাইরের অংশ পরিষ্কার করে দিন।
শিশুর শরীর মালিশ না করা: শরীর মালিশ করে দিলে শিশু আরামবোধ করে। শুষ্ক ও খসখসে ত্বকের চিকিৎসা হিসেবে মালিশ চমৎকার কাজ করে। এতে শিশুর পেশি মজবুত হয় এবং দ্রুত বাড়তে সাহায্য করে। স্নানের ঠিক আগে শিশুর শরীর মালিশ করে দেওয়ার উপযুক্ত সময়।