হার্বাল চা এখন বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয়। পুষ্টিবিদরা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রাকৃতিক চায়ের উপরেই জোর দিচ্ছেন। কফি এবং জনপ্রিয় ক্যাফিনযুক্ত পানীয়গুলি (কফি, চা, স্পোর্টস পানীয় ইত্যাদি) ক্ষতিকারক প্রভাব বেশ বেশি। গিনসেং রুট এমন একটি ঔষধি যা চা তৈরির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। শক্তি বুস্টার হিসাবে পরিচিত এই পানীয় শতাব্দী ধরে কোরিয়ানদের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
ঐতিহ্যগতভাবে, গিনসেং চা’তে কোন চা পাতা থাকে না, বরং জুজুবে ফল এবং কোরিয়ান চেস্টনাটসের সাথে জিনসেং শিকড় মিশিয়ে তৈরি হয়। কোরিয়ায় বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলেই এই চা খায়। কোরিয়ান ভাষাতে `ইনসাম-চা` নামে পরিচিত। কিন্তু জিন্সং চা কি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী? আসুন, দেখা যাক!
গিনসেং (Ginseng) চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা
দুই ধরণের গিনসেং চা হয়- এশিয়ান (চীন ও কোরিয়া থেকে) এবং আমেরিকান। কোরিয়ান বা এশিয়ান চা একটি উষ্ণ বৈচিত্র্য সম্পন্ন, যদিও আমেরিকান গিনসেং শীতল প্রকৃতির হয়। কোরিয়ান এই চা দীর্ঘদিন ধরে খাওয়া উচিত নয় বলেই মনে করা হয়। এই চায়ে ginsenosides নামে প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপস্থিত থাকে যা অ্যান্টিঅক্সিডেটিভ, প্রদাহবিরোধী। কোরিয়ানরা ঐতিহ্যগতভাবে তাদের শরীর ও মন পুনর্নবীকরণ এবং সামগ্রিক সুস্থতা উন্নত করতে এই চা ব্যবহার করেন।
এখানে গিনসেং চা পানের কিছু উপকারিতা জেনে নিন আপনিও:
১. ওজন হ্রাস: এই চা ওজন হ্রাসে সাহায্য করতে পারে, কারণ এটি প্রাকৃতিকভাবে খিদে নিয়ন্ত্রণ করে।
২. হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ: গিনসেং চাকে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার বলা হয়।
৩. হরমোনের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার: এই চা নারীদের জন্য বিশেষভাবে ভালো। হরমোন ভারসাম্য বজায় রেখে স্তন ক্যান্সার, এন্ডোমেট্রিওসিস এবং হরমোন ভারসাম্য দ্বারা সৃষ্ট অন্য সমস্যা দূর করে।
৪. শরীর ও মস্তিষ্ককে পুনরুজ্জীবিত করে: এই চা পান করার পরে অনেক মানুষের মস্তিষ্কের দক্ষতা বেড়েছে এবং মনোযোগও বৃদ্ধি হয়েছে। গিনসেং একটি অ্যাডাপ্টোজেন, যা চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে সহ্য করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. হার্ট ভালো রাখে: গিনসেং চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসের সমৃদ্ধ উৎস, যা হৃদরোগের জন্য ভাল। এই চা হৃদস্পন্দনের হার কমায় এবং হার্টের অক্সিজেনের চাহিদা হ্রাস করে।
৬. ত্বকের স্বাস্থ্য: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ গিনসেং মশলার রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রদাহ সমস্যায় সমাধান করে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ‘Miracle of Herbs and Spices` বই অনুযায়ী র্যাডিকেল-বিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির কারণে ত্বকের বয়স কমাতে সাহায্য করে এই জাতীয় হার্বস।
৭. প্রতিরক্ষা ক্ষমতা শক্তিশালী করে: গিনসেং চা ঠান্ডা লাগা ও ফ্লুয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ঐতিহ্যবাহী ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার জন্য পরিচিত। ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়া বাড়ায় এটি।
৮. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: আমেরিকান এবং কোরিয়ান গিনসেং ইনসুলিন রেসিস্টেন্স হ্রাস করে, এই চা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ জন্য উপকারী।
৯. যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করে: যৌন স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য কোরিয়ায় পুরুষরা গিনসেং চা এবং ওয়াইন খান। এই চা উদ্ভিদ উৎস থেকে প্রাপ্ত ফাইটো টেস্টোস্টেরনের উৎস। গিনসেং শুক্রাণু গণনাকে উন্নত করতে পারে এবং এড্রেনাল এবং প্রোস্টেট গ্রন্থিগুলির কার্যকারিতা বাড়ায়।
এই চায়ের উপকারিতা যেমন রয়েছে আবার বেশি খেলে খারাপ প্রভাবও দেখা যেতে পারে, অনিদ্রা এবং নার্ভাসনেস, রক্ত জমাট বাঁধা, বমি বমি ভাব, বমি, মাথাব্যাথা, ইত্যাদি হতেও পারে। খাবার আগে পুষ্টিবিদ বা ডায়েটিয়ানের সাথে পরামর্শ করা উচিত।