প্রতিদিনের সকালের নাশতায় আমরা বেশিরভাগ সময়ই রুটি খেয়ে থাকি। যা আটা কিংবা ময়দা দিয়ে তৈরি করা হয়। এই নাশতা যেহেতু ছোট-বড় সবার জন্যই তৈরি করা হয়, তাই তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি আপনাকেই বেশি সচেতন হতে হবে।
যেহেতু প্রতিদিন সকালের নাশতায় রুটি খাওয়ার অভ্যাস বেশিরভাগেরই আছে, তাই একসঙ্গে অনেকদিনের আটা কিংবা ময়দা কিনে রাখেন অনেকেই। প্রতিদিন ব্যবহার হয় বলে সেই আটা ও ময়দা বেশিরভাগ সময় এতই দ্রুত ফুরিয়ে যায় যে তা নষ্ট হয়ে গেছে কি-না সে ব্যাপারে চিন্তা করার প্রয়োজন হয়না। তবে সুস্থ থাকতে চাইলে এখন থেকে বিষয়টি নিয়ে ভাবুন।
‘ওয়েলঅ্যান্ডগুড’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের রন্ধনশিল্পী এবং সনদস্বীকৃত পুষ্টিবিদ আরিয়ান রেজনিক বলেন, প্রিজারভেটিভ ধরনের খাবার যেমন- চিনি কিংবা মধু বাদে যেকেনো খাবারই একসময় নষ্ট হয়।
‘ইউ.এস. ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)’য়ের মতে, আটা ও ময়দায় আর্দ্রতা কম থাকে এবং এগুলো তাপ দিয়ে প্রস্তুত করায় তা অনেকদিন ভালো থাকে। এমনকি প্যাকেটের তারিখ অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া পরও আটা ও ময়দা ভালো থাকে। তবে সেজন্য জানতে হয় সংরক্ষণ করার সঠিক উপায়।
যে কারণে নষ্ট হয়
দেখে মনে না হলেও আটা ও ময়দা কাঁচা খাবার যা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।
রেজনিক বলেন, খোলা রাখলে বাতাসে আটা ও ময়দা নষ্ট হয়ে যায়। পরিবেশ যদি ৭৮ ডিগ্রি ফারেনফাইনের বেশি গরম হয় তবে আটা ও ময়দায় থাকা প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়। কতদিন ভালো থাকবে তা ধরনের উপরেও নির্ভরশীল।
যেমন- সাদা আটা বা ময়দা সবচাইতে বেশি দীর্ঘস্থায়ী। কারণ এর থেকে ‘ব্র্যান’ সরিয়ে ফেলা হয় আর তাতেই থাকে ওই তেল। তবে যেকোনো আটা-ময়দা কক্ষ তাপমাত্রায় কয়েক বছর ভালো থাকে। আবার যে আটা বা ময়দায় চর্বির মাত্রা বেশি সেটাও দ্রুত নষ্ট হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক সনদ স্বীকৃত পুষ্টিবিদ মেলিসা রিফকিন বলেন, অনেক দিনের পুরানো আটা বা ময়দা দিয়ে তৈরি যেকোনো খাবারের স্বাদ স্বাভাবিকের তুলনায় কমই হবে। অর্থাৎ ভালো থাকবে মানে তা খাওয়ার যোগ্য। তবে স্বাদ অক্ষুণ্ন নাও থাকতে পারে।
তবে এফডিএ’য়ের পরামর্শ হলো নতুন হোক আর পুরানো, আটা ও ময়দা কখনই কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যাবে না। যেসব শস্য থেকে আটা ও ময়দা তৈরি হয় তার সবই উৎপাদন হয় খোলা পরিবেশে, ফলে তাতে অসংখ্য ধরনের জীবাণু থাকবেই।
নষ্ট হওয়ার লক্ষণ
রেজনিক বলেন, আটা ও ময়দা যখন নষ্ট হয় তখন তাতে তেল-জাতীয় একটা গন্ধ সৃষ্টি হয়। এর কারণ হলো আটা ও ময়দায় থাকার প্রাকৃতিক তেল তার রূপ পাল্টাচ্ছে। সেই সঙ্গে রং পরিবর্তন হতে পারে, জমাট বেঁধে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আটা বা ময়দা নষ্ট হয়েছে তা বোঝার আরেকটি উপায় হলো তাতে পোকা দেখা দেয়া। অত্যন্ত ক্ষুদ্র হলেও এই পোকা খালি চোখে দেখা যায়।
এই পুষ্টিবিদের পরামর্শ, যদি পোকার মাত্রা কম থাকে তবে রোদে দিতে পারেন। অথবা চুলায় গরম করে নিতে পারেন।
তবে কোনো অবস্থাতেই ওভেনে আটা বা ময়দা গরম করতে যাবেন না, আগুন ধরে যেতে পারে। আটা ও ময়দা ফ্রিজে রেখেও সংরক্ষণ করা যায়।
সঠিক সংরক্ষণ
দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে চাইলে কাগজ কিংবা প্লাস্টিকের ব্যাগ আটা ও ময়দা ভালো রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। রাখতে হবে বায়ুরোধক কৌটায়। সেই কৌটা হতে পারে প্লাস্টিক, ধাতব কিংবা কাচের। আটা বা ময়দা পূর্ণ কৌটা রাখতে হবে শুকনা স্থানে। আবার কৌটায় করে ফ্রিজ কিংবা ডিপ ফ্রিজেও রাখা যায়।