একটি শিশুর ভবিষ্যৎ কোন পথে চালিত হবে এবং সে কেমন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে, তার অনেকটাই নির্ভর করে তার বাবা-মায়ের উপর। শৈশবে অর্জিত মূল্যবোধ ও অভ্যাসই তাদের জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে। তাই, সন্তানদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎের জন্য ছোটবেলা থেকেই তাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু ইতিবাচক অভ্যাস অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। অনেক বাবা-মা হয়তো শুধু পড়াশোনা ও কিছু প্রাথমিক বিষয়ের উপর জোর দেন, যা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর পাশাপাশি এমন কিছু অভ্যাসও শিশুদের রুটিনে যোগ করা প্রয়োজন, যা তাদের সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে এবং উন্নত জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে। এই অভ্যাসগুলো তাদের ভবিষ্যতের উপর সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক, সেই গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসগুলো কী কী যা শিশুদের প্রতিদিন অনুশীলন করা উচিত।
১. প্রতিদিন প্রার্থনা করার অভ্যাস:
ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের মধ্যে প্রতিদিন প্রার্থনা করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। এর একাধিক উপকারিতা রয়েছে। প্রথমত, শিশুরা তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবে এবং দ্বিতীয়ত, তারা মানসিক শক্তি ও অবলম্বন লাভ করবে। প্রতিদিনের প্রার্থনা শিশুদের মন থেকে ভয় ও উদ্বেগের মতো নেতিবাচক অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে এবং তাদের মানসিক শান্তি এনে দেয়। এটি তাদের মধ্যে কৃতজ্ঞতার ভাব জাগিয়ে তোলে এবং এই ছোট্ট অভ্যাসটি তাদের সারা জীবন আবেগগতভাবে সাহায্য করবে।
২. ঘরের কাজে বাচ্চাদের সাহায্য নেওয়া:
শিশুদের বয়স অনুযায়ী তাদের ছোট ছোট ঘরের কাজ দেওয়া উচিত। এটি তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরি করে এবং স্বাবলম্বী হতে শেখায়। ছোট বাচ্চাদের তাদের খেলনা গুছিয়ে রাখা বা বিছানা পরিপাটি করার মতো কাজ দিন। একটু বড় হলে ধীরে ধীরে তাদের থালা-বাসন ধোয়া বা রান্নার কাজে ছোটখাটো সাহায্য করতে উৎসাহিত করুন। এমনকি, বাচ্চাদের মুদিখানার কিছু জিনিসপত্র আনার দায়িত্বও দিতে পারেন। মূল কথা হল, তাদের উপর কিছু দায়িত্ব অর্পণ করুন এবং নতুন নতুন প্রয়োজনীয় দক্ষতা শিখতে সাহায্য করুন।
৩. পরিবারের সাথে খাবার খাওয়ার অভ্যাস:
আগের দিনে প্রায় সব পরিবারেই সকলে একসাথে বসে খাবার খেতেন। সেখানে হাসি-ঠাট্টা যেমন চলত, তেমনই বাড়ির কারোর কোনো সমস্যা হলে তার সমাধানও খুঁজে পাওয়া যেত। কিন্তু আজকাল বেশিরভাগ পরিবারেই সকলে আলাদাভাবে খায় এবং মোবাইল বা অন্যান্য গ্যাজেটে ব্যস্ত থাকে। এর ফলে পারিবারিক বন্ধনের উপর খারাপ প্রভাব পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাবা-মায়ের উচিত ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের পরিবারের সাথে বসে খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা। এটি শুধু পারিবারিক সম্পর্ককে মজবুত করবে না, বরং আপনার সন্তান তার সমস্যা ও মনের কথা আপনার সাথে সহজে ভাগ করে নিতে পারবে। এছাড়াও, এর মাধ্যমে শিশুর খাদ্যাভ্যাসেরও উন্নতি ঘটবে।
৪. বাচ্চাদের সাথে তাদের ও আপনার দিন নিয়ে কথা বলা:
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বাবা-মায়ের অবশ্যই কিছুক্ষণ তাদের সন্তানদের সাথে সময় কাটানো উচিত। এটি হল সেই সেরা সময় যখন আপনি আপনার সন্তানের সাথে আবেগগতভাবে জুড়ে থাকতে পারেন এবং আপনাদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতে পারেন। এই সময় তাদের জিজ্ঞাসা করুন তাদের দিন কেমন কেটেছে এবং আপনার দিন কেমন ছিল তাও তাদের বলুন। এর মাধ্যমে শিশুরা আপনার সাথে মন খুলে সবকিছু আলোচনা করতে শিখবে এবং আপনার সম্পর্কেও অনেক প্রশ্ন করবে। এটি নিশ্চিত করবে যে আপনাদের দুজনের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং মানসিক সংযোগ খুব শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এছাড়াও, শিশুর যোগাযোগ দক্ষতাও উন্নত হবে।
৫. শিশুদের মধ্যে কৃতজ্ঞতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলা:
প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শিশুদের একটি কৃতজ্ঞতা জার্নাল লেখার অভ্যাস করতে বলুন। এটি খুব কঠিন কিছু করার প্রয়োজন নেই। আপনি তাদের শুধু বলতে পারেন তাদের জীবনে যা কিছু ভালো ঘটেছে তার জন্য ঈশ্বর বা প্রকৃতির কাছে ধন্যবাদ জানাতে। আপনি তাদের পাঁচটি জিনিসের একটি তালিকা তৈরি করতে বলতে পারেন যার জন্য তারা কৃতজ্ঞ। এর মূল উদ্দেশ্য হল শিশুদের মধ্যে কৃতজ্ঞতার অনুভূতি তৈরি করা। এটি তাদের মধ্যে জীবনের প্রতি একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে এবং তারা মানসিকভাবে সুখী ও শান্ত থাকবে। এই অভ্যাসটি শুধু তাদের বর্তমান নয়, সারা জীবনের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে।
ছোটবেলা থেকে এই অভ্যাসগুলো গড়ে তোলার মাধ্যমে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের একটি উজ্জ্বল ও সফল ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারেন।