সৌন্দর্য নিয়ে বিতর্ক চিরন্তন। মানুষের আসল সৌন্দর্য কি তার বাহ্যিক রূপে, নাকি তার ভেতরের মননে? যুগ যুগ ধরে বলা হয়ে আসছে মনের সৌন্দর্যই আসল। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা এই চিরাচরিত ধারণায় নতুন আলো ফেলেছে। জার্মান গবেষকরা বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে ছিপছিপে গড়নের মানুষের তুলনায় স্থূলকায় মানুষের মন অনেক বেশি সুন্দর হয়।
আজকের সমাজে স্লিম এবং টোনড বডির প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ দেখা যায়। এই ‘আদর্শ’ শরীরের পেছনে ছুটতে গিয়ে অনেকেই কঠোর ডায়েট মেনে চলেন, এমনকি খাওয়া-দাওয়াও বাদ দেন। অপুষ্টিতে ভোগেন, অসুস্থও হয়ে পড়েন অনেকে। তবুও সমাজের চোখে ‘সুন্দর’ হওয়ার এই প্রতিযোগিতা চলতেই থাকে।
তবে জার্মানির একদল গবেষক সম্প্রতি একটি গবেষণা পরিচালনা করে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য সামনে এনেছেন। তারা জানিয়েছেন, অন্যদের তুলনায় স্থূলকায় ব্যক্তিরা অনেক বেশি সৎ এবং নমনীয় স্বভাবের অধিকারী হন। এই গবেষণার জন্য ২০ জন স্থূলকায় এবং ২০ জন ছিপছিপে গড়নের মানুষের একটি দল গঠন করা হয়েছিল।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি বিশেষ খেলার আয়োজন করা হয়, যেখানে তাদের অর্থ প্রদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। গবেষকরা লক্ষ্য করেন, অর্থের লেনদেনের ক্ষেত্রে ছিপছিপে গড়নের মানুষেরা তুলনামূলকভাবে কম সুবিবেচক এবং সৎ ছিলেন। অন্যদিকে, স্থূলকায় ব্যক্তিরাই অর্থের ব্যাপারে বেশি সততার পরিচয় দিয়েছেন এবং সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছেন।
মেট্রো ইউকেতে প্রকাশিত এই গবেষণার গবেষকরা জানিয়েছেন, অর্থ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই খেলায় অংশগ্রহণকারীদের ওজন এবং শরীরের গ্লুকোজের পরিমাণও পরিমাপ করা হয়েছিল।
এই গবেষণা আপাতদৃষ্টিতে প্রচলিত সৌন্দর্য ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। যেখানে স্লিম বডিকে আকর্ষণীয় এবং সুন্দর মনে করা হয়, সেখানে এই গবেষণা বলছে স্থূলকায় ব্যক্তিদের মধ্যে সততা ও নমনীয়তার মতো গুণাবলী বেশি দেখা যায়, যা নিঃসন্দেহে মানসিক সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই ফলাফল হয়তো মানুষের সৌন্দর্য বিচারের চিরাচরিত মানদণ্ডকে নতুন করে ভাবতে শেখাবে। শারীরিক কাঠামোর ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের ভেতরের গুণাবলী এবং মানসিক সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।