শরীরের এই বিশেষ অংশে কখনোই হাত দেওয়া উচিত নয়, বারণ করছে বিশেষজ্ঞরা

আমাদের হাতে জীবাণু থাকে যা শরীরের সংবেদনশীল অংশে হাতের স্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে জীবাণুরা আরো জীবাণু জড়ো করে যা অন্যান্য মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। নিচের অভ্যাসগুলো আপনার স্বাস্থ্য এবং আপনার চারপাশের মানুষদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে।

১. মুখমণ্ডলে হাত দিবেন না

কফি শপে চোখ বুলালে দেখবেন যে অনেক মানুষ মুখমণ্ডলে হাত দিয়ে আরাম করছেন বা বিশ্রাম নিচ্ছেন। কিন্তু আপনি যদি হাত না ধুয়ে থাকেন কিংবা ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ না করেন তাহলে তাদের মতো এমনটা করবেন না। মাইক্রোবায়োলজিস্ট বা অণুজীব বিশেষজ্ঞ ম্যাথিউ লি বলেন, ‘আপনার হাতে তৈল থাকে যা লোমকূপকে বন্ধ করে দিতে পারে এবং আপনার ব্রণের অবস্থাকে আরো খারাপ করে তুলতে পারে।’ হাতের আঙুলের জীবাণু এই ফলাফলকে আরো খারাপ দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই আপনার মুখমণ্ডলকে পরিষ্কার এবং ব্রণ বা ফুস্কুড়ি মুক্ত রাখতে মুখমণ্ডলে হাতের স্পর্শ লাগাবেন না।

২. চোখে হাত দিবেন না

চোখ অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। তাদেরকে হাত দিয়ে স্পর্শ করলে চোখে শুধুমাত্র জীবাণু নয়, অতি ক্ষুদ্র ময়লা ঢোকারও ঝুঁকি থাকে যার ফলে চোখে জ্বালাতন হতে পারে বা চোখ কচলাতে পারে বা চোখ নিশপিশ করতে পারে এবং চোখের কর্ণিয়ায় আঁচড় বা দাগ পড়তে পারে। আপনাকে যদি অবশ্যই চোখে হাত দিতে হয় তাহলে আগে হাত সম্পূর্ণরূপে ধুয়ে নিন। চোখ কচলানি থেকে বিরত থাকুন, কারণ এ অভ্যাস সময়ের স্রোতে চোখের নিচে রিঙ্কলস বা বলিরেখা এবং ব্ল্যাক সার্কেলস বা কালো দাগ সৃষ্টি করে। চোখ জ্বালাতন বা চুলকানি বা শুষ্কতা সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।

৩. কানে হাত দিবেন না

আমাদের কানের ভিতরের অংশ কোমল বা নরম এবং এতে ক্ষতি হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। তাই কানের খইল দূর করতে কানের গভীরে হাতের আঙুল বা অন্য কিছু প্রবেশ করানোর চেষ্টা করবেন না। লির মতে, ‘আপনার কখনো আপনার কানের গভীরে আঙুল ঢোকানো উচিত নয়। কানের ক্যানেলের ত্বক খুব পাতলা এবং ছিঁড়ে যাওয়ার প্রবণতাযুক্ত।’ লি পরামর্শ দেন যে, নিজে নিজে চিকিৎসা না করে যেকোনো সমস্যা নির্ণয় করতে ওটোল্যারিঙ্গোলজিস্ট বা কান বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে।

৪. নাকে হাত দিবেন না

আপনার নাকের ভেতর এটির নিজস্ব উপকারী ব্যাকটেরিয়া আছে। সেখানে আপনার আঙুল প্রবেশ করানোর মানে হল বিভিন্ন অপকারী ব্যাকটেরিয়ার সন্নিবেশ ঘটানো যা ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে। উপরন্তু, আপনার আঙুলের সঙ্গে নাকের ব্যাকটেরিয়া চলে আসতে পারে এবং চারপাশে ছড়াতে পারে যা বিশেষ করে ঠান্ডা বা ফ্লু সিজনের সময় সমস্যার কারণ হয়।

৫. মুখে হাত দিবেন না

গড়ে প্রতিটা মানুষের মুখে ৩৪ থেকে ৭২ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া থাকে। এসব ব্যাকটেরিয়ার বেশিরভাগই ক্ষতিকারক নয় এবং কিছু মুখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু আপনার হাতের মাধ্যমে (পাশাপাশি আপনি হাত দিয়ে যা স্পর্শ করেন, যেমন- দরজার হাতল, কল বা চুঙ্গি, রেলিং বা রেলিংয়ের খুঁটি বা পিল্পা, মাইক্রোওয়েভ বাটন) অতিরিক্ত জীবাণু মুখে যুক্ত হলে মুখের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং এতে আপনি অসুস্থ হয়ে যাবেন। আপনি যদি অসুস্থ হন তাহলে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বা হ্যান্ডশেক করেন বা জিনিসপত্র আদানপ্রদান করেন তাদের মধ্যে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসব ঝুঁকি কমাতে মুখে হাত দিবেন না। ঠান্ডা এবং ফ্লু প্রতিরোধের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করুন।

৬. পশ্চাদ্দেশে হাত দিবেন না

জীবাণু ছড়ানোর একটি উত্তম উপায় হল পায়ু অঞ্চলে হাতের স্পর্শ, এটি ঝুঁকিপূর্ণও বটে। মাইক্রোবানের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরিজের এমডি এবং পরিচালক গ্লেনার রিচার্ডসনের মতে, পশ্চাদ্দেশে বা পায়ু অঞ্চলে হাত দেওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, শরীরের পায়ু অঞ্চলে হাতের স্পর্শে গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল এলাকায় বসবাসরত অণুজীব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুখে বা চোখে সহজে চলে আসতে পারে যা ইনফেকশন হওয়ার প্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা রাখে।

৭. নাভিতে হাত দিবেন না

আপনার শরীরের সবচেয়ে নোংরা অংশ হল নাভি, তা কি আপনি জানতেন? ড. রিচার্ডসন বলেন, ‘বেলি বাটন বা নাভি প্রচুর পরিমাণ ব্যাকটেরিয়াকে আশ্রয় দেয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটির বেশিরভাগ অংশ অনধিগম্য বা অপ্রবেশ্য, তাই স্নানের পরও এটি নোংরা থেকে যায়।’ আপনার নাভির গঠনই এমন যে এটিতে সহজে নোংরা সংগৃহীত হয় এবং কড়া দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। ড. রিচার্ডসন জীবাণুযুক্ত আঙুল দিয়ে নাভি স্পর্শ না করার বিষয়ে সতর্ক করেন, কারণ এতে স্পর্শ মারাত্মক ইনফেকশনের দিকে ধাবিত করে।

৮. নখে হাত দিবেন না

হাতের নখ এবং পায়ের নখে অবিশ্বাস্য পরিমাণে নোংরা ও জীবাণু থাকে। এমনকি সযত্ন হাত ধুয়েও সম্পূর্ণরূপে জীবাণু দূর করা যায় না। এ কারণে ডাক্তার এবং নার্সরা হাতে গ্লাভস পরিধান করে। যেসব অন্যমনস্ক ব্যক্তিরা এসব নখ অনিচ্ছাকৃতভাবে ভাঙে বা খসিয়ে ফেলে তাদের হাতে ময়লা এবং ব্যাকটেরিয়া লেগে যায় যা শরীরের অন্যান্য অংশে বা উপরিভাগে ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাত দিয়ে নখ ভাঙার অভ্যাস ত্যাগ করুন, কারণ এটি আপনার এবং আপনার চারপাশের মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর।

Related Posts

© 2024 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy