দেশে চাকরি ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা এখনো অনেক কম। বর্তমানে বেসরকারি সংস্থাগুলো ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুর করে। তারপর কাজে ফিরতে হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে সন্তান জন্মের পর চাকরি ছেড়ে দেওয়া নারীর সংখ্যা অনেক বেশি। সন্তানের সঙ্গে দিন-রাত কাটানোর পর কাজে ফিরতে মন চায় না নারীদের। এমনকি দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকার ফলে তাদের শরীরে আলসেমি ও অবসাদ চলে আসে।
সন্তান দেখাশোনা, সংসার সামলানো একসঙ্গে পালন প্রতিটি মায়ের জন্যই কঠিন। তাই ছুটি শেষে চাকরিতে যোগদান করতে গিয়ে সম্মুখীন হতে হয় নানা বাধার। তেমনি সন্তানকে ফেলে চাকরি করায় ভুগতে হয় আত্মযন্ত্রণায়। এ সমস্যার সমাধানে বিশেষজ্ঞরা দিয়েছেন নানা পরামর্শ। তাই জেনে নিন কিছু টিপস:
শরীরকে প্রস্তুত করুন
এতদিন বাড়িতে থাকার ফলে আপনার শরীর একটু ধীর হয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে অফিস যেতে শুরু করলে শরীর মানিয়ে নিতে পারবে না। তখন বিধ্বস্ত লাগবে। এনার্জি পাবেন না। কোনো কাজে লাগবে না মন। তাই আর সময় নষ্ট না করে আজ থেকেই শরীরকে সচল করে তোলার চেষ্টায় লেগে পড়ুন। চেষ্টা করুন প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার। পাশাপাশি জিমে গিয়ে ঘাম ঝরাতেও পারেন। তাহলেই মানিয়ে নিতে পারবে শরীর। অফিসে যেতে সমস্যা হবে না।
কেয়ার গিভারকে দেখাশোনা করতে দিন
সন্তানকে রেখে কাজে গেলেই কেউ ‘খারাপ মা’ হয়ে যান এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। আপনার শিশু জন্মানোর আগেই এমন একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ঠিক করে রাখুন, যিনি বা যারা আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার সন্তানকে দেখবে। বর্তমানে বেশকিছু নির্ভরযোগ্য শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র বা ডে কেয়ার রয়েছে। পরিচিতদের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
কাজের কথা মাথায় রাখুন
লম্বা সময় বিরতিতে হয়তো পিছিয়ে গেছেন। হঠাৎ করে একদিন অফিসে গিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন না। তাই কাজ করে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন এবং অতিরিক্ত কাজের চাপ নিয়ে ফেলেন। তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নিন, বসের সঙ্গে কথা বলুন। সন্তানের জরুরি প্রয়োজনে যেন ছুটি নিতে পারেন, সেটিও বলে রাখুন। তাহলেই দেখবেন অফিসে গিয়ে আর অসুবিধা হবে না। সব কাজ দ্রুত সেরে ফেলতে পারবেন।
মনকে শক্ত করুন
জানি নিজের সন্তানকে ছেড়ে থাকতে আপনার বুক ফেটে যাবে। সারাদিন তার কাছেই পড়ে থাকবে মন। কিন্তু আপনি কাজে না গেলে যে সংসারের অর্থনৈতিক দিকটা দুর্বল হয়ে যাবে। আপনিও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হারাবেন। এই বিষয়গুলো কখনো ভেবে দেখেছেন কি? না ভেবে থাকলে আজ থেকে তা মাথায় গেঁথে নিন। তাহলেই অনায়াসে মনকে শক্ত করে ফেলতে পারবেন। এর পর খুশি খুশি মনেই অফিস যেতে পারবেন।
জমিয়ে রাখুন ব্রেস্টমিল্ক
সন্তানের বয়স যদি ৬ মাসের মতো হয়, তাহলে তাকে প্যাকেটজাত দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি মাতৃদুদ্ধও খাওয়ান। সেক্ষেত্রে অফিসে যাওয়ার আগে এবং অফিস থেকে ফেরার পর ব্রেস্ট পাম্পের সাহায্যে একটি বোতলে দুধ ভরে নিন। সেই দুধ রেখে দিন ফ্রিজারে। তারপর সন্তানের খিদে পেলে তাকে ওই দুধ খাওয়াতে বলুন। এই কাজটা করলেই তার শরীরের হাল ফিরবে। দূরে থাকবে একাধিক জটিল অসুখ।