মাছের কাঁটা গলায় আটকে থাকলে কী করবেন কী করবেন

মাছে-ভাতে বাঙালি’ কথাটা আমরা সকলেই জানি। মাছ ভাত ছাড়া বাঙালি যেমন হয় না, তেমনি বাঙালি ছাড়া মাছ আর ভাত হয় না। মাছ বাঙালির জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানাতে বাঙালিরা পান্তা ভাত আর ইলিশ খেয়ে থাকে। বাঙালির বৈচিত্র যেন অন্যান্য সংস্কৃতি থেকে একেবারে আলাদা। তাই তো সারাবিশ্বে বাঙালির রয়েছে এক ভিন্ন রকম প্রশংসা।

মাছে ভাতে বাঙালি হলেও মাছের কাঁটা কিন্তু আমাদের জন্য বেশ পীড়াদায়ক। ঠিক না? কেননা বাঙালিরা যে হারে মাছ খেতে পারে সে হারে গলায় কাঁটা বিধিয়ে কান্নাকাটিও করতে পারে। তবুও মাছের জন্য বাঙালির ভালোবাসা কোন অংশেই কমে যাবে না। অনেক হলো মাছ নিয়ে আলোচনা।

এই ফাঁকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম যে, আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হবে গলায় মাছের কাঁটা বিঁধে গেলে কী করবেন। বাঙালি হিসেবে যদিও আমাদের সকলেরই জানা রয়েছে গলায় কাঁটা বিঁধলে কি করতে হবে তবুও আরেকবার না হয় মনে করিয়ে দেয়া যাক।

অনেক ধরনের পদ্ধতি আমাদের পূর্বপুরুষ, ঠাকুমা ঠাকুর্দারা বের করে গিয়েছেন। তাদের দেখানো পথ ধরে ও কিছু আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে কয়েকটি উপায় নিম্নে আলোচনা করা হল। দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

কোমল পানীয়
আপনাদের হয়তো কোন আইডিয়াই নেই যে কোমল পানীয় মাছের কাঁটা গলা থেকে বের করতে সাহায্য করে। এর কারন কি জানেন? কেননা এতে রয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড। যখন আপনার গলায় কাঁটা প্রবেশ করবে আপনার যদি ঘরে কোমলপানীয় বা কোক থেকে থাকে আপনার উচিত এক নিশ্বাসে যতটা সম্ভব ততটা কোক গিলতে থাকা।

যখন কোক গলায় ফুটে থাকা মাছের কাঁটায় লাগবে তখন মাছের কাঁটা নরম হয়ে যাবে। এই মাছের কাঁটা নরম হয়ে গেলে নিজে নিজে নেমে আসবে। সুতরাং পদ্ধতিটি বেশ ভালোই মাছের কাঁটা গলাতে এবং খুব দ্রুত এই অসহ্যকর যন্ত্রণা থেকে স্বস্তি পেতে চাইলে এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে দেখতে পারেন।

কলা
কলা বারোমাসি ফল। বাঙ্গালীদের ঘরে ঘরে কলার আনাগোনা দেখা যায়। এটি যতটা না পুষ্টিগুণে ভরপুর, ততটাই উপকারী। কলার পুষ্টিগুণ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কলা একটি পিচ্ছিল ফল। যার কারণে যদি মাছের কাঁটা গলায় বিধার পর দ্রুততার সাথে কলা চাবাতে পারেন, সেই কলা তার পিচ্ছিলতার পরিচয় দিয়ে আস্তে করে কাঁটা গলা থেকে নামিয়ে দিবে।

সুতরাং আপনার বাসায় চেষ্টা করুন প্রতিনিয়ত কলার রাখার। আর কলা থাকা অবস্থায় যদি আপনার গলায় কাঁটা ফুটে যায় সাথে সাথে এ প্রক্রিয়াটি অবলম্বন করুন। আশা করি ভাল ফলাফল পাবেন।

সাদা ভাত
এই পদ্ধতিটি আমাদের সকলেরই জানা। ছোট কোনো শিশুর গলায় মাছের কাঁটা বিঁধে গেলে বাড়িতে থাকা মা-বাবা দিদা সকলেই এই পদ্ধতিটির নাম আগে বলেন। নির্দ্বিধায় পদ্ধতিটি বেশ কার্যকর। কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখবেন, শুধু সাদা ভাত গিললে কিন্তু গলায় ফুটে থাকা জেদি কাঁটা নামাতে পারবেন না।

আপনার উচিত সাদাভাত অনেক গুলো একত্রে নিয়ে বল বানিয়ে অতঃপর গিলে ফেলা। এতে করে ভাতের বলের সাথে গলায় ফুটে থাকা কাঁটা তরতর করে নেমে যাবে। প্রথমবারের নাও নামতে পারে তাই দু তিনটা বল আস্ত গিলে ফেলতে হবে।

অলিভ অয়েল
তেলজাতীয় পদার্থ মানেই পিচ্ছিল আর অলিভ অয়েল কাঁচা খাওয়া যায়। অলিভ অয়েল কাঁচা খেলে কোন অসুবিধা হয় না। তবে অবশ্যই পরিমাণ ঠিক রেখে খেতে হবে। অন্যথায় পেট খারাপ করবে। গলায় কাঁটা বিঁধে গেলে আপনার উচিত এক চামচ অলিভ অয়েল ধীরে ধীরে গিলে ফেলা।

এতে করে কিছুক্ষণের মাঝে কাঁটাটা আস্তে করে নিচে নেমে যাবে। তবে এক চামচ এর অধিক অলিভ ওয়েল খেতে যাবেন না। এতে আপনার মুখে অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি তৈরি করতে পারে। আশা করি ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন।

ভিনেগার
গলায় বেঁধে থাকা কাঁটা নামাতে ভিনেগার বেশ উপকারী। এক্ষেত্রে আপনাকে জলের সঙ্গে সামান্য পরিমাণ ভিনেগার যোগ করতে হবে। এরপর সেই জল পান করতে হবে। তাহলে গলা থেকে কাঁটা সহজে নেমে যেতে পারে।

জল
জলের কোন তুলনা হয় না। যেহেতু জল তরল পদার্থ সুতরাং খুব সহজেই অন্ননালী দিয়ে এটি পাকস্থলীতে পৌঁছে যেতে পারে। যদি আপনার গলায় মাছের কাঁটা বিঁধে থাকে আপনার উচিত কয়েক ঢোঁক জল গিলে ফেলা। অধিক পরিমাণে জল পান করার পরে একসময় খেয়াল করবেন কাঁটা গলা থেকে নেমে গিয়েছে। যখন কাঁটা গলা থেকে নেমে যাবে তখন জল পান করা বন্ধ করে দিন। যেহেতু আর দরকার নেই তাই।

হোমিওপ্যাথি
উপরোক্ত সকল পদ্ধতি গুলো ছিল ঘরোয়া চিকিৎসা শাস্ত্র যা প্রাচীনকাল থেকে মেনে আসা হচ্ছে। তবে বর্তমানে মাছের কাঁটা গলায় ফুটলে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি উল্লেখযোগ্য। সাধারণত হোমিওপ্যাথির অন্তর্ভুক্ত “সাইলেশিয়া” কাঁটা গলিয়ে আপনাকে যন্ত্রণামুক্ত রাখতে পারবে। তাই চেষ্টা করুন ঘরেতে এক শিশি সাইলেশিয়া রেখে দেয়ার।

ফলে যখনই গলায় কাঁটা অনুভব করবেন তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরিমাণ সাইলেশিয়া খেয়ে নেবেন। এতে করে কাঁটা একেবারে গলে যাবে এবং আপনার যন্ত্রণা কমে গিয়ে আপনি আরাম পাবেন।

লবণ
লবণ মাছের কাঁটা গলাতে বেশ কার্যকরী একটি উপাদান। তবে খালি লবণ না গিলে উষ্ণ গরম জলের মধ্যে লবণ মিশিয়ে সেটা ঢকঢক করে পান করুন। এতে করে খুব দ্রুত মাছের কাঁটা গল যাবে এবং তা নিচে নেমে আসবে।

পাউরুটি
ভাতের মত পাউরুটিও মাছের কাঁটা নামাতে সাহায্য করে। তাই যখন গলায় মাছের কাঁটা বিঁধে যাবে চেষ্টা করুন পাউরুটি নরম করে কয়েক দলা করে গিলে ফেলতে। আশা করা যায় এতে ভালো ফল পাবেন।

এই ছিল মাছের কাঁটা গলায় বিঁধলে কি করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়লে আপনি উপকৃত হবেন। এছাড়াও গলা থেকে মাছের কাঁটা নামানোর অন্য কোন পদ্ধতি যদি জানা থাকে সেটা পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy