যারা শরীরের মেদ ও চর্বি কমিয়ে অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাচ্ছেন তাদের ডায়েটিং, ব্যায়ামসহ নানা প্রচেষ্টার অন্ত নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সফলতার হার খুবই কম। এর সমাধানে বর্তমান সময়ে একটি ডায়েটিং পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মূলত সফলতার হার থেকেই এ জনপ্রিয়তা অর্জিত হয়েছে। এটি হচ্ছে ‘কিটো ডায়েট’।
বর্তমান সময়ে কিটো ডায়েট খুব প্রচলিত একটি খাদ্যাভ্যাস পদ্ধতি। যার মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে শরীরের মেদ ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে অল্প কিছুদিনের জন্য একটি নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। এই ডায়েট পদ্ধতিতে একুশ দিনে ১০ কেজি পর্যন্ত কমানো সম্ভব। তবে, কিটো ডায়েট করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
কিটোজেনিক ডায়েট হল সুপার লো-কার্ব ডায়েট। এই ডায়েটে কার্ব এক্সট্রিম (extreme) লেভেলে কম থাকবে আর ফ্যাট অনেক হাই থাকবে আর প্রোটিন মিড লেভেলে (mid level) থাকবে। আমাদের নরমাল ডায়েটে ৫০% কার্বোহাইড্রেট থাকে, ২০% প্রোটিন আর ৩০% ফ্যাট থাকে। টিপিক্যাল কিটোজেনিক ডায়েটে টোটাল ক্যালোরিক নিডের কার্ব ৫%, প্রোটিন ২৫% আর ফ্যাট থাকে ৭০%। মানে আপনি সারাদিন যতটা খাবার খাবেন তার মধ্যে খাবারের পার্সেন্টেজ এমন হবে। এ জন্য আপনাকে জানতে হবে কোন কোন খাবারে কী পরিমাণ কার্ব, প্রোটিন, ফ্যাট ইত্যাদি থাকে।
কী করতে হয়?
চাল, আটা, চিনি, আলু, দুধ ও সয়াবিন তেলের তৈরি যেকোনো খাবার তিন/চার সপ্তাহ খাওয়া যাবে না। যেমন ভাত, রুটি, পাউরুটি, মিষ্টি, ফাস্টফুড, বাইরের ভাজা-পুড়া, কোল্ড ড্রিংস ইত্যাদি। যেসব ফল স্বাদে মিষ্টি সেগুলোও সাময়িক সময়ের জন্য বাদ দিতে হবে। মোট কথা দুই/তিন সপ্তাহ শরীরকে সুগার ও শর্করা মুক্ত রাখতে হবে।
যেসব খাবার খেতে পারবেন না
– চিনি বা মিষ্টিজাতীয় কোন কিছু একদম বাদ। কোক, ফলের জুস, কেক, আইসক্রিম, চকোলেট, স্মুদি, যেকোন ধরনের মিষ্টি।
– আটার তৈরি কিছু, ভাত, পাস্তা, নুডলস, ওটস, কর্নফ্লেক্স সব বাদ।
– সবধরনের ফল নিষেধ। সাধারণত অন্যান্য ডায়েটে ফলের জায়গাটুকু থাকলেও কিটো ডায়েটে সেটা নেই। কারণ, ফলে প্রচুর পরিমাণ শর্করা থাকে। আপনি কিটো ডায়েটে মাত্র ২০ গ্রাম শর্করা গ্রহণ করতে পারবেন। অন্যদিকে একটি বড় আপেল থেকেই ২৫ গ্রাম শর্করা পাবেন।
– সবধরনের ডাল নিষেধ। ডালে প্রোটিনের পাশাপাশি ভালো পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে।
– আলু, মূলা, গাজর, কচু সব বাদ দিতে হবে।
– যেকোন ধরনের প্রসেস ফুড একদম বাদ দিতে হবে।
কী কী খেতে পারবেন
মুরগি, সবধরনের মাছ, ডিম, বাটার, পনির, দই, ঘি, বাদাম, হেলদি অয়েল-যেমন অলিভ ওয়েল, কোকনাট ওয়েল, সূর্যমুখী অয়েল, যেকোন লাল-সবুজ সবজি, পালং, ব্রকলি, বাধাকপি, ফুলকপি, লাউ, মোটামুটি সবধরনের মসলা, ফলের মধ্যে জলপাই, অ্যাভোকাডো, স্ট্রবেরি, লেবু খেতে পারবেন।
কিটোজেনিক ডায়েটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
– কিটোজেনিক ডায়েট গ্রহণ করলে শুরুর দিকে সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন, জল ও লবণের ভারসাম্যহীনতা
– হঠাৎ কিটো ডায়েট শুরু করলে শরীরে জল ও মিনারেলের ভারসাম্য কমে যেতে পারে। ফলে রক্তচাপের কম বেশি হতে পারে। এতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কিংবা লবণ বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
– অতিরিক্ত ফ্যাট গ্রহণের ফলে কিটো ডায়েটে হজমের সমস্যা হতে পারে। কারও কারও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। তখন ফাইবার জাতীয় সবজি বেশি করে খেতে হবে। ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্টও ওষুধ হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। অনেকের আবার ডায়রিয়াও হতে দেখা যায়। এমন হলে স্যালাইন ও ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে ২-৩ সপ্তাহ ধরে কিটো ডায়েট চার্ট মেনে চললে ধীরে ধীরে তা শরীরের সাথে মানিয়ে যায় এবং পরে আর কোনো সমস্যা হয় না।
সকালের ব্রেকফাস্ট
– যাদের সকালে খাওয়ার অভ্যাস তারা আটটা বা সাড়ে আটটার দিকে দুধ চিনি ছাড়া এক কাপ চা খেতে পারেন। চায়ের মধ্যে যা দেবেন, আদা, লেবু, সামান্য লবণ।
– অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বা কোকনাট ভিনেগার খেতে পারেন কুসুম গরম জলের সাথে।
– এবং কুসুম গরম জলের সাথে লেবু চিপে খেতে পারেন।
সকাল আটটায় ব্রেকফাস্ট খেলে দেড়টার ভেতর দুপুরের খাবার খেতে হবে। এছাড়া যাদের দেরিতে ব্রেকফাস্ট খাওয়ার অভ্যাস তারা এগারোটার দিকে উপরোক্ত পদ্ধতিতে ব্রেকফাস্ট করবেন এবং দুপুরের খাবার আড়াইটা তিনটায় খাবেন।
দুপুরের খাবার
– দুপুরের খাওয়ার আগে অবশ্যই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এক চামচ এক গ্লাস জলের সাথে মিশিয়ে খাবেন। এতে আপনার গ্যাসের সমস্যা হবে না এবং চর্বি কাটতে সাহায্য করবে।
– দুপুরের খাবারের ম্যানুতে শাক, সবজি, মাছ অথবা মাংস , ঘি এ ভাজা ডিম, ঘি’য়ে ভাজা বাদাম সাথে বাটার রাখতে পারেন এবং অবশ্যই টমেটো, গাজরসহ শসা বা শসার সালাদ রাখবেন।
– শাক, সবজি অবশ্যই এক্সট্রা ভার্জিন ওলিভয়েল দিয়ে রান্না করবেন। মাছ ভাজলে (ডীপ ফ্রাই থেকে বিরত থাকবেন এতে খাদ্যগুন নস্ট হয়) বা রান্না করলে এই তেল দিয়েই করবেন। সবজি যতটুকু সম্ভব কম সেদ্ধ করবেন। যেন সবজির গুণগত মান ঠিক থাকে।
– ডিম কুসুম সহ ঘি বা মাখন দিয়ে ভেজে খাবেন। এক দিনে সর্বোচ্চ ছয়টা ডিম কুসুম সহ খেতে পারবেন কোন সমস্যা নেই। কারণ ডিম প্রোটিন এবং ভালো ফ্যাটের উৎস তবে একবার ফ্যাট এ্যাডাপটেশন হয়ে গেলে চাইলেও এত খেতে পারবেন না।
– দেশি মুরগি খেতে পারেন, এক দুই টুকরো অথবা উল্লিখিত গরুর মাংস । মাছ খেলে মাংস খাবেন না। মাংস খেলে মাছ খাবেন না। তবে প্রবাসে অবস্থানকরীগণ ফার্মের মুরগি এক টুকরো করে খেতে পারেন৷ কারণ সেখানে ফার্মের মুরগিকে আদর্শ খাবার খাওয়ানো হয় (যদিও মুরগী ব্যায়াম করে না যেটা দেশী মুরগী করে )।
– দুম্বা, উট, ভেড়ার মাংস খেলে এক টুকরোর বেশি নয়।
বিকেলের টিফিন
বিকেলে ক্ষুধা লাগলে উপরে উল্লেখিত চা, বাটার কফি এবং বাদাম খাবেন যে কোন প্রকার মাখন বা ঘি দিয়ে ভাজা বা মেশানো।
রাতের খাবার
– রাতের খাবারের পূর্বেও ভিনিগার মিশ্রিত এক গ্লাস জল খেয়ে নিবেন।
– রাতের খাবার দুপুরের অনুরূপ খাবেন। আইটেম দুই একটা কম বেশি হোক কোন সমস্যা নেই।
– রাত আটটার আগেই সমস্ত খাবার শেষ করুন। এরপর আর জল ছাড়া কিছুই খাবেন না।bs