তৈলাক্ত ত্বকের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া। ফলে ব্রণ থেকে শুরু করে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। তৈলাক্ত ত্বকের মানুষদের বারবার মুখ পরিষ্কার করতে হয়।
রাসায়নিক সমৃদ্ধ বিভিন্ন ফেস মাস্ক ত্বকের অয়েলি ভাব কমায়। কিন্তু এগুলো ত্বকের ক্ষতিও করে। রাসায়নিকের ব্যবহারের ফলে যা ক্ষতি হয় তা তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষতির চেয়েও বেশি ভয়াবহ। তবে ত্বকের এই সমস্যা দূর করার কয়েকটা সহজ ও প্রাকৃতিক উপায়ও আছে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি বিভিন্ন ফেসিয়াল মাস্ক ত্বকের তৈলাক্তভাব দূর করে। নিম্নে এ রকম কিছু ফেসিয়াল মাস্ক নিয়ে আলোচনা করা হলো-
১) লেবু এবং দই ফেস মাস্ক
লেবুতে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে যা আমাদের ত্বক থেকে নির্গত হওয়া তেল প্রতিরোধে সাহায্য করে। দইতে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে যা প্রাকৃতিকভাবে ত্বক পরিষ্কার করে। এই ফেস প্যাক ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং ব্রণ দূর করে ত্বক সুন্দর করে।
এর জন্য আপনাকে ২ টেবিল চামচ দই এবং ২ টেবিল চামচ লেবুর রস মেশাতে হবে। ফেস প্যাক ব্রাশের সাহায্যে মুখে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট রেখে দিয়ে হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর ওয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে। সপ্তাহে একদিন এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ত্বকের তৈলাক্তভাব দূর হবে।
২) মুলতানি মাটি এবং শশা ফেস মাস্ক
মুলতানি মাটি ত্বকের পরিচর্যায় ব্যবহৃত একটা প্রাচীন উপাদান। এটা ত্বকের ময়লা এবং অতিরিক্ত তেল দূর করে। ব্রণর সমস্যা দূর করতে মুলতানি মাটি ব্যবহৃত হয়। আর শশায় ভিটামিন সি এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান আছে যা ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করতে, সিবাম দূর করতে এবং ময়লা এবং মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে।
এর জন্য ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি আধ ঘণ্টা জল ভিজিয়ে রাখতে হবে। এর মধ্যে ১ টেবিল চামচ পাতি লেবুর রস এবং ২ টেবিল চামচ শশার রস যোগ করতে হবে। শুষ্কতা দূর করতে প্রয়োজনে দুধ ব্যবহার করতে পারেন। মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিয়ে তারপর ঠাণ্ডা বা গরম জল ধুয়ে ফেলুন। তেল এবং ময়লার পাশাপাশি এই ফেস প্যাক আপনার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন হতে সাহায্য করবে। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ২-৩ দিন এটা ব্যবহার করুন।
৩) কমলা লেবুর খোসার মাস্ক
কমলা লেবুর খোসা আমাদের ত্বক উজ্জ্বল করে। এর জন্য আপনাকে কমলা লেবুর খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করতে হবে। তারপর তার মধ্যে কিছুটা জল, দুধ বা দই মেশান। তারপর মুখে লাগিয়ে রেখে দিন। এই মাস্ক ত্বকের তেল, ময়লা দূর করে এবং ত্বক করে তোলে উজ্জ্বল এবং মসৃণ।
৪) ডিমের সাদা অংশের মাস্ক
ডিমের সাদা অংশ আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করার পাশাপাশি এটি আমাদের ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে। দইয়ের সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বক পরিষ্কার হয় এবং ভাল ফল পাওয়া যায়।
একটা ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে এক টেবিল চামচ দই মেশান। আলাদা করা ডিমের কুসুম দিয়ে আপনি চুলের মাস্ক বানাতে পারেন। দই এবং সাদা অংশ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে শুকিয়ে শক্ত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ঈষদুষ্ণ জল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন এই মাস্ক ব্যবহার করুন এবং পরিষ্কার, তেল বিহীন ত্বক পান।
৫) ওটস এবং অ্যাভোক্যাডো মাস্ক
ওটস অত্যন্ত উপকারী। এটা আমাদের ত্বকের সিবাম দূর করে ফলে অতিরিক্ত তেল ময়লা দূর হয়। অ্যাভোক্যাডোতে প্রয়োজনীয় ফ্যাট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ওটসের সঙ্গে অ্যাভোক্যাডো মিশিয়ে মাখলে ত্বক উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর হয় এবং অতিরিক্ত তেল দূর হয়।
এই মাস্ক তৈরির জন্য হাফ কাপ ওটমিল এবং অর্ধেকটা পাকা অ্যাভোক্যাডো প্রয়োজন। ওটস জল ভিজিয়ে রাখুন আর অ্যাভোক্যাডোর খোসা টুকরো করুন। পাঁচ মিনিট পর ভিজে ওটসের সঙ্গে চটকে অ্যাভোক্যাডোটা মিশিয়ে ফেলুন। এরপর সেই মিশ্রণ ১০-১৫ মিনিট মাস্ক হিসাবে মুখে লাগিয়ে রাখুন। তারপর ঠাণ্ডা জল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনি কোমল, মসৃণ ও পরিষ্কার ত্বক পাবেন।