ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দুঃসংবাদ: ছোট অসুস্থতাও হতে পারে মারাত্মক!

গত কয়েক দশকে ডায়াবেটিস একটি অত্যন্ত পরিচিত রোগ হয়ে ওঠায় অনেকেই এটিকে হালকাভাবে নিতে শুরু করেছেন। কিন্তু ডায়াবেটিস কেবল রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়েই ক্ষান্ত হয় না, নিয়ন্ত্রণ না করা হলে এটি শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গেরও মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। বছরের পর বছর ধরে এটি কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা এবং স্নায়ুর ক্ষতির দীর্ঘস্থায়ী পথ তৈরি করতে পারে। অনেকেই জানেন না যে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে ঠান্ডা, ফ্লু এবং অন্যান্য সাধারণ সংক্রমণের মতো ছোটখাটো অসুস্থতা থেকেও সেরে ওঠা কঠিন হতে পারে।

কেন ডায়াবেটিস রোগীদের অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠা কঠিন হয়?
যেকোনো অসুস্থতার সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় আমাদের শরীর আরও বেশি গ্লুকোজ তৈরি করে, যা ডায়াবেটিস-সম্পর্কিত জটিলতার কারণ হতে পারে। এর মধ্যে ডায়াবেটিক কেটোঅ্যাসিডোসিস (DKA) এবং হাইপারসমোলার হাইপারগ্লাইসেমিক সিন্ড্রোম (HHS) অন্যতম। এই অতিরিক্ত গ্লুকোজই রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠাকে কঠিন করে তোলে।

রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়লে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
যারা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন, তারা একটি সুশৃঙ্খল খাদ্যতালিকা মেনে চললে এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার ৪টি স্তম্ভ রয়েছে – খাদ্য, ব্যায়াম, ওষুধ এবং শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা। একটি সুষম খাদ্যতালিকা মেনে চলতে হবে যাতে প্রোটিন এবং ফাইবার বেশি থাকে কিন্তু কার্বোহাইড্রেট এবং চর্বি কম থাকে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কী খাবেন?
একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাদ্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুষম খাদ্য তাদের দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই, ছোটখাটো সর্দি বা যেকোনো ধরনের অসুস্থতায় ভুগলে রক্তে শর্করার মাত্রার বাড়তি যত্ন নেওয়া অত্যাবশ্যক।

একটি সুষম খাদ্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কার্যকর হলেও, বহু বছর ধরে একই রুটিন অনুসরণ করা কঠিন হতে পারে। তাই এ ধরনের খাবারের পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনতে হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীকে চিনি, গুড়, মধু এবং মিহি আটা থেকে তৈরি খাবার যেমন পাউরুটি এবং অন্যান্য বেকারি পণ্য এড়িয়ে চলতে হবে। এমনকি তৈলাক্ত খাবার খাওয়াও কমাতে হবে, কারণ এগুলো শরীরের চর্বি বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।

সামগ্রিক ক্যালোরি গ্রহণের ওপর ফোকাস করা অত্যাবশ্যক। একজন রোগীর শরীরের ওজন এবং কার্যকলাপের স্তর অনুসারে ক্যালোরির পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। সাধারণভাবে রোগীদের শক্তি-ঘন খাবার, ভাজা আইটেম, ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলতে হবে। এর বদলে উচ্চ ফাইবার এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।

কখন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীর সাধারণভাবে প্রতি ৩-৬ মাস পরপর অথবা তাদের সামগ্রিক ক্লিনিকাল প্রোফাইলের উপর ভিত্তি করে নিজ নিজ ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত। এছাড়া, গর্ভাবস্থার পরিকল্পনা করার আগে, গর্ভাবস্থায়, কোনো পরিকল্পিত অস্ত্রোপচারের আগে বা অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ যা তাদের গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করতে পারে – এমন ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy