জানেন কেন কাঠের হাতা-খুন্তি ও বাসনে বেশি জীবাণু জমে? তাহলে পড়ুন

রান্নার কাজে ব্যবহৃত কাঠের হাতা, খুন্তি বা অন্যান্য বাসনপত্র দেখতে সুন্দর হলেও, অন্যান্য উপকরণের তৈরি বাসনের তুলনায় এগুলোতে জীবাণু এবং ময়লা বেশি জমে। এর প্রধান কারণ হলো কাঠের প্রাকৃতিক গঠন। কাঠের উপরিভাগে অসংখ্য ছোট ছোট ছিদ্র থাকে যা খালি চোখে দেখা যায় না। রান্নার সময় তেল, মশলা এবং খাবারের ক্ষুদ্র কণা সহজেই এই ছিদ্রগুলোর মধ্যে প্রবেশ করে এবং ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে সেখানে স্থায়ীভাবে জমা হতে থাকে।

এছাড়াও, কাঠের বা বাঁশের বাসন যদি ব্যবহারের পর সঠিকভাবে শুকানো না হয়, তবে ভেজা অবস্থায় খুব সহজেই ছত্রাক জন্মাতে পারে। আমাদের দেশের আর্দ্র আবহাওয়া এই ছত্রাকের বংশবৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে অনুকূল। তাই, রান্নাঘরের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে এবং নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে কাঠের বাসন ব্যবহারের পর সঠিক উপায়ে পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা কাঠের বাসন পরিষ্কার রাখার জন্য কিছু সহজ উপায় বাতলেছেন। নিয়মিত এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে কাঠের বাসন জীবাণুমুক্ত রাখা সম্ভব:

১. গরম জল ও সাবান: কাঠের বাসন ব্যবহারের পরপরই গরম জল ও হালকা সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি খাবারের কণাগুলোকে জমাট বাঁধতে বাধা দেবে এবং বাসন সহজে পরিষ্কার হবে। অতিরিক্ত জেদি দাগ তোলার জন্য কিছুক্ষণ সাবান জলে ভিজিয়ে রাখতে পারেন।

২. ভিনিগার দ্রবণ: সাদা ভিনিগার একটি চমৎকার প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক এবং ছত্রাকরোধী উপাদান। ভিনেগার ও জলের সমান অনুপাতে একটি দ্রবণ তৈরি করুন। কাঠের বাসন কিছুক্ষণ এই দ্রবণে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পরিষ্কার জল দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। ভিনিগারের অ্যাসিডিক বৈশিষ্ট্য জীবাণু ধ্বংস করতে সহায়ক।

৩. বেকিং সোডার পেস্ট: বেকিং সোডা শুধু ছত্রাকরোধী নয়, এটি দাগ এবং দুর্গন্ধ দূর করতেও অত্যন্ত কার্যকর। সামান্য জলের সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি কাঠের বাসনের উপর ঘষে কিছুক্ষণ রেখে দিন, তারপর সাধারণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৪. লেবুর রস ও লবণ: লেবুর রসে প্রাকৃতিক ব্লিচিং এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। অন্যদিকে, লবণ ঘষে ময়লা তুলতে সাহায্য করে। লেবুর রসের সাথে সামান্য লবণ মিশিয়ে কাঠের বাসনে ঘষলে তা পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত থাকে এবং এর প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।

৫. সঠিকভাবে শুকানো: কাঠের বাসন পরিষ্কার করার পর সেগুলোকে ভালোভাবে শুকিয়ে নেওয়া ছত্রাক প্রতিরোধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাসন ধোয়ার পর একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিন এবং তারপর খোলা হাওয়ায় অথবা রোদে শুকাতে দিন। কখনোই ভেজা অবস্থায় কাঠের বাসন স্তূপ করে রাখবেন না। পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল নিশ্চিত হলে ছত্রাক জন্মানোর সম্ভাবনা কমে যায়।

কাঠের বাসনপত্রের সঠিক যত্ন নিলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং আপনার রান্নাঘরকে জীবাণুমুক্ত রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই, এই সহজ পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আপনার কাঠের হাতা, খুন্তি ও অন্যান্য বাসনকে সুরক্ষিত রাখুন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy