কোমল পানীয়তে কেন আসক্তি তৈরি হয়? গোপন কারণ এল প্রকাশ্যে

পরিচিতদের মাঝে খুঁজলেই এমন এক-দুইজন পাওয়া যাবে, যারা প্রতিদিন কোমল পানীয় পান না করে থাকতে পারেন না। জল মতোই কোমল পানীয় পান করা যেন এক অত্যাবশক অভ্যাসে পরিণত হয়ে ওঠে তাদের জীবনে। এটাকে ঠিক অভ্যাসও বলা যায়, বরং বলা যেতে পারে আসক্তি। শুধু গেমস খেলার উপরেই নয়, প্রবল আসক্তি তৈরি হতে পারে মিষ্টি এই পানীয়ের উপরেও। কারণ অভ্যাস অল্প সময়ের মাঝে পরিবর্তন করা যায়, আসক্তিকে সহজেই পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না।

কোমল পানীয় পানের বিষয়টিও অনেকটা তেমনভাবে কাজ করে। ফলে দেখা গেছে আসলেও সুস্বাদু ও পরিচিত কোমল পানীয়গুলোর সাথে আসক্তিজনিত সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু নিরীহ চেহারার কোমল পানীয় কীভাবে আসক্তি তৈরি করে বলে ভাবছেন? এখানে জানানো হলো তার আসল কারণগুলো।

এতে থাকা চিনি
১২ আউন্স পরিমাণ এক ক্যান কোকাকোলায় থাকে প্রায় ৩৯ গ্রাম পরিমাণ চিনি, যা প্রায় দশ টেবিল চামচের সমান। ফলে যখন কোমল পানীয় পান করা হয় তখন রক্তে হুট করেই চিনির মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উপর প্রভাব তৈরি করে এবং ব্রেইন কেমিক্যাল ডোপামিন নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি করে। ভালো বোধ করার এই হরমনটি নিঃসরণের ঘটনাটি অনেকটা ড্রাগসের মতো কাজ করে। এমনকি এই আসক্তি কোকেইন গ্রহণের আসক্তির চাইতেও বেশি হতে পারে।

ক্যাফেইনের প্রভাব
কোমল পানীয়তে থাকা চিনিকেই শুধু দোষ দিলে হবে না, এতে থাকা ক্যাফেইনও কিন্তু সমানভাবে দায়ী আসক্তি তৈরির জন্য। প্রায় সকল ধরনের কোমল পানীয়তেই থাকে ক্যাফেইন, যা এক ধরনের স্টিমুলেশন হিসেবে আমাদের মস্তিষ্কে কাজ করে। ফলে যখনই আমরা কোমল পানীয় পান করি, মস্তিষ্ক ক্যাফেইনের দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়। এতে করে একটা নির্দিষ্ট সময় পর মস্তিষ্কের ক্যাফেইনের চাহিদা তৈরি হয়। এতে করে কোমল পানীয়ের প্রতি আসক্তি চলে আসে। নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মেরিলিন কর্নেলিস জানান, পুরো বিশ্ব জুড়ে ক্যাফেইন সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করা হয়, যা একটি সাইকোস্টিমুলেন্ট হিসেবে কাজ করে। প্রায়শ ক্যাফেইন গ্রহণে শরীর ও মস্তিষ্ক এতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। ফলে পুনরায় ক্যাফেইনের চাহিদা দেখা দেয়।

ফিজ ফ্যাক্টর
কোমল পানীয়ের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হলো এর ফিজ। ক্যান বা বোতলের মুখ খোলার সাথে সাথেই যে ঝাঁজটা পাওয়া যায় সেটাই যেন মনকে চনমনে করে দেয়। কার্বনেটেড পানীয়ের এই বৈশিষ্ঠ্যটাও বেশ আসক্তিকারক। ফিজের সাথে অল্প মাত্রার অ্যাসিডিটি সাথে চিনির মিশ্রণে যে পানীয় তৈরি হয়, সেটা সত্যিই খুব প্রশান্তিদায়ক। এই রিফ্রেশিং ভাবটাই মূলত কোমল পানীয়ের দিকে বারবার টেনে নেয়।

চিনি নেই? তবুও সমস্যা
এখন জিজ্ঞাসা করতেই পারেন যে ডায়েট কোলাতে তো কোন চিনি নেই, সেটা পানে সমস্যা আছে কি? হ্যাঁ এখানেও সমস্যা আছে। চিনি না থাকলেও এতে থাকে নিজস্ব আসক্তি তৈরিকারি উপাদান। মূলত এই পানীয় তৈরিতে টেস্ট রিসেপ্টর ব্যবহার করা হয়, যা চিনি ছাড়াই পানীয়কে মিষ্টি করে। ফলে এইএ পানীয় পানে কোলার কাছাকাছি স্বাদ পাওয়া গেলেও মস্তিষ্ক তার প্রয়োজনীয় চিনি উপাদান পায় না। ফলে যতবারই ডায়েট কোলা পান করা হোক না কেন, মস্তিষ্ক প্রতিবারই জানান দেয় এটা যথেষ্ট নয়, আরও প্রয়োজন। ফলে এক্ষেত্রেও বারবার কোমল পানীয় বা ডায়েট কোলার দিকে ঝুঁকতে হয়।

মাসে একদিন বা দুইদিনের জন্য কোমল পানীয় পান করলে খুব একটা সমস্যা নেই। কিন্তু প্রতিদিন অন্তত এক-দুই বোতল বা ক্যান কোমল পানীয় পান করাকে অ্যালার্মিং বলা হচ্ছে। এতে করে শুধু যে কোমল পানীয়ের প্রতি আসক্তি তৈরি হয় তাই নয়, টাইপ-২ ডায়বেটিস কিংবা হাই কোলেস্টেরলের সমস্যাও দেখা দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy