সুস্থ জীবন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে মেটাবলিজম বা বিপাক ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সক্রিয় মেটাবলিজম অতিরিক্ত ক্যালোরি ঝরিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করা, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে। আমরা অনেকেই মেটাবলিজম বাড়ানোর উপায় জানি, কিন্তু কিছু সাধারণ অভ্যাস যে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তা হয়তো অনেকেই জানি না। জেনে নিন এমন পাঁচটি ভুল অভ্যাস সম্পর্কে, যা আপনার মেটাবলিজম নষ্ট করে দিতে পারে।
যেসব অভ্যাস মেটাবলিজম কমায়
খুব কম খাবার খাওয়া: অনেকেরই ধারণা, কম ক্যালোরি খেলেই দ্রুত ওজন কমে। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না যে, প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম ক্যালোরি গ্রহণ করলে তা আপনার মেটাবলিজমকে ধীর করে দিতে পারে। ওজন কমানোর জন্য ক্যালোরি ঘাটতি প্রয়োজন ঠিকই, তবে অতিরিক্ত কম ক্যালোরি গ্রহণ করলে শরীর খাদ্যের অভাব অনুভব করে এবং ক্যালোরি পোড়ানোর হার কমিয়ে দেয়। এতে ওজন কমার বদলে উল্টো ফল হতে পারে।
অলস জীবনযাপন: নিষ্ক্রিয় বা অলস জীবনযাপন প্রতিদিনের ক্যালোরি পোড়ানোর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় থেকে অনেকে বাড়িতে বসে কাজ করছেন, ফলে সারাদিন বসে থাকার প্রবণতা বেড়েছে। এতে মেটাবলিজমসহ সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। হাঁটা, ঘর পরিষ্কার করা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা, রান্না করা – এই ধরনের প্রতিটি শারীরিক কার্যকলাপই আপনাকে ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে। এই কার্যকলাপগুলোকে নন-ব্যায়াম কার্যকলাপ থার্মোজেনেসিস (NEAT) বলা হয়।
পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ না করা: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া অপরিহার্য। প্রোটিন দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে এবং আপনার শরীরের ক্যালোরি পোড়ানোর হার বাড়ায়। খাবার হজমের সময় মেটাবলিজমের যে বৃদ্ধি ঘটে, তাকে খাবারের তাপীয় প্রভাব বলা হয়। প্রোটিনের তাপীয় প্রভাব চর্বি বা কার্বোহাইড্রেটের চেয়ে অনেক বেশি। প্রোটিন খেলে আপনার মেটাবলিজম ২০-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যেখানে কার্বোহাইড্রেট খেলে ৫-১০ শতাংশ এবং চর্বিতে ৩ শতাংশ বা তার চেয়ে কম বৃদ্ধি ঘটে।
পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া: সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। কম ঘুম হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং বিষণ্নতাসহ বিভিন্ন অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ায়। অপর্যাপ্ত ঘুম মেটাবলিজম হার কমিয়ে দিতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ায়। সময়মতো না ঘুমালে তা ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করে, যা আপনার বিপাক ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
প্রচুর রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট খাওয়া: রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট, যেমন সাদা আটা বা চিনি, হজম হতে কম সময় নেয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। এগুলো ভাঙার জন্য আমাদের শরীর কম শক্তি ব্যবহার করে, ফলে প্রচুর পরিমাণে রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট খেলে তা মেটাবলিজমকে ধীর করে দেয়। এর বদলে আস্ত শস্য (Whole Grains) খাওয়ার অভ্যাস করুন। আস্ত শস্য ভাঙতে শরীরের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, যা বেশি ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে।