নারীদের জীবনে মধ্য বয়সে (৪০ থেকে ৪৫ বছরের পর) একটি সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত অস্বস্তিকর সমস্যা হলো ‘হট ফ্লাশ’। এটি হলো হঠাৎ প্রচণ্ড গরম লাগা, ঘেমে-নেয়ে অস্থির হওয়া, এবং কখনো কখনো মুখ ও কান লাল হয়ে যাওয়ার মতো শারীরিক উপসর্গ। মেনোপজ বা মাসিক বন্ধ হওয়ার দু-এক বছর আগে থেকে এই সমস্যা শুরু হতে পারে এবং টানা ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
🌡️ হট ফ্লাশের মূল কারণ:
-
হরমোনের মাত্রা হ্রাস: ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সের পর থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে আসা হট ফ্লাশের প্রধান কারণ। মেনোপজের পর এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়।
-
অস্ত্রোপচার: কারও যদি অস্ত্রোপচার করে জরায়ু বা ডিম্বাশয় অপসারণ করা হয়, তাহলে হরমোনের মাত্রা দ্রুত কমে যাওয়ার কারণে এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
সাধারণত দিনে ৫ থেকে ১০ বার হট ফ্লাশ হতে পারে। এর বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করা উচিত।
✅ হট ফ্লাশ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার ৭টি নিয়ম-শৃঙ্খলা:
হট ফ্লাশ নিয়ন্ত্রণ করতে কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তন প্রয়োজন:
-
পোশাক ও মেকআপ: হালকা রঙের পাতলা সুতির কাপড়ের পোশাক পরুন। ভারী কাপড়চোপড় এবং অতিরিক্ত মেকআপ গরম লাগার অনুভূতি বাড়িয়ে দেবে।
-
খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ: চা-কফি, স্যুপসহ গরম ও মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রচুর জল পান করুন এবং শীতল, কম তেল-মসলার খাবার খান। প্রচুর সালাদ ও সবুজ শাকসবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
-
ঠান্ডা রাখা: খুব গরম লাগলে একটু বরফ মুখে নিয়ে চিবুতে পারেন। তবে কোমল পানীয় এড়িয়ে চলাই ভালো।
-
বাতাস চলাচল: অফিস বা বাড়িতে কাজের সময় খোলামেলা বাতাসযুক্ত জায়গায় বা ফ্যানের নিচে বসুন।
-
প্রাকৃতিক ইস্ট্রোজেন: সয়া, কালিজিরা, ছোলা, ডালজাতীয় খাবারে প্রাকৃতিক ফাইটো ইস্ট্রোজেন থাকে, যা উপকার দিতে পারে। তুলসী চা পান করাও আরামদায়ক।
-
নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক যত্ন: নিয়মিত ব্যায়াম করুন। যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ এড়ানোর চেষ্টা করুন।
-
চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ: গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে হরমোন সাপ্লিমেন্ট, সিনথেটিক ইস্ট্রোজেন বা অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট জাতীয় ওষুধ (যেমন: ক্লোনিডিন, ডুলেক্সেটিন) সেবন করা যেতে পারে। তবে মনে রাখবেন, এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোমতেই এগুলো সেবন করা যাবে না।