শখের বশে ঘরে কুকুর, বিড়াল পোষা এখন নতুন কিছু নয়। খুব আদুরে স্বভাবের এবং সহজে পোষ মানে বলে পোষা প্রাণী হিসেবে কুকুর, বিড়াল এখন বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু ঘরে পোষ মানানোর আগে পোষা প্রাণী এবং তার সাথে সাথে ঘরের সদস্যদের নিরাপত্তার কথা অবশ্যই চিন্তা করতে হবে। পোষা কুকুর ও বিড়াল কামড়ালে বা আঁচড় দিলেও জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। শুধু ঘরের পোষা প্রাণীই নয়, বাইরের কুকুর-বিড়ালের আঁচড় কামড়ও ডেকে আনতে পারে নানা বিপদ। সে বিষয়েই বিস্তারিত কিছু তথ্য জেনে নেই চলুন।
কুকুর ও বিড়ালের কামড়ে যা হতে পারে
মারাত্মক গভীর ক্ষত ও ফ্র্যাকচার হতে পারে
ধনুস্টংকার হতে পারে
জলাতঙ্ক হতে পারে
ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগও কুকুর বিড়ালের আঁচড় বা কামড় থেকে ছড়াতে পারে
জোরে কামড়ালে ত্বকের নিচের রক্তনালী, স্নায়ু ও পেশীর ক্ষতি হয়
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের, তাদের পাস্তুরেলা রোগ হতে পারে। যার ফলে গাট ও গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, হাঁটাচলায় সমস্যা হতে পারে
জলাতঙ্ক কখন হয়?
জলাতঙ্ক কখন হয়
র্যাবিস ভাইরাস দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হলে যে লক্ষণ প্রকাশ পায় তাকে জলাতঙ্ক বলে। এটি একটি মারাত্মক রোগ, যা একবার হলে রোগীকে বাঁচানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী মারা যায়। এই ভাইরাস একা একাই মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। শুধুমাত্র র্যাবিড এনিম্যাল যেমন কুকুর, শেয়াল, বিড়াল, বানর, ইঁদুর, বেজি, বাদুর, গরু, ছাগল ইত্যাদি যদি র্যাবিস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং মানুষকে কামড়ায় তবেই এ রোগ হয়। এসব জীবের মুখের লালায় র্যাবিস ভাইরাসের জীবাণু থাকে। তবে মনে রাখবেন কুকুর কামড়ালেই জলাতঙ্ক হবে না যদি না কুকুর বা কামড়ানো জীবের লালায় র্যাবিস এর জীবাণু থাকে। দাঁত বসিয়ে দিলে বা আঁচড়ের মাধ্যমে এ জীবাণু রক্তের সংস্পর্শে আসলে রক্তের মাধ্যমেই শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টি করে।
জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ
রোগীর জলের পিপাসা বেড়ে যায়, কিন্তু জল দেখলেই ভয় পায়
খাবার গিলতে কষ্ট হয়
মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা পড়ে
মেজাজ খিটখিটে বা আক্রমণাত্মক হয়ে যায়
জ্বর, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে
প্রলাপ বকতে পারে
অতিরিক্ত চঞ্চলতা বা অস্থিরতা দেখা দেয়
চিকিৎসা কী?
একবার রোগীর জলাতঙ্ক হয়ে গেলে তার আর কোনো চিকিৎসা নেই। কিন্তু কুকুর, বিড়াল বা যেকোনো প্রাণী আঁচড় বা কামড় দিলে জলাতঙ্ক যাতে না হয় সে জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা এবং প্রতিষেধক এর প্রয়োজন।
১) প্রথমেই আক্রান্ত স্থানের ক্ষত ও রক্তপাতের মাত্রা খেয়াল করতে হবে এবং রক্তপাত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধ করতে হবে।
২) সাবান ও উষ্ণ জল দিয়ে ক্ষতস্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। কমপক্ষে ২০ মিনিট ধরে ক্ষতস্থান টিউবওয়েল বা ট্যাপের জলের ধারায় পরিষ্কার করতে হবে।
৩) কাটাস্থানে ধুলাবালি ও ময়লা যেন না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৪) ক্ষতস্থান বেশী গভীর হলে তাতে টাইট বাঁধন বা ব্যান্ডেজ দেয়া যাবে না। ক্ষতস্থান উন্মুক্ত রাখতে হবে এবং নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
৫) ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার সাথে সাথে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে বা ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী র্যাবিস ভ্যাক্সিন নিয়ে নিতে হবে।
৬) প্রথমদিন ভ্যাক্সিন দেয়ার পর ৩, ৭, ১৪ এবং ২৮ তম দিন মোট ৫ ডোজ টিকা নিতে হবে।
৭) র্যাবিস ভ্যাক্সিন এর সাথে সাথে ধনুস্টংকার বা টিটেনাস এর টিকাও দিতে হবে।