কমবয়সি সেলফিপ্রেমীরা হয়ে উঠছেন স্বার্থপর, যেকারণে এমন দাবি গবেষকদের?

ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের (Social Media) দিকে যদি খেয়াল করেন আপনার অবশ্যই মনে হবে যে নার্সিসিজম্ বা আত্ম-প্রেমে ডুবে যাচ্ছে বিশ্বের সব দেশের মানুষ- অন্তত ডিজিটাল বিশ্বে এই প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।
আর এটা কিন্তু মোটেই ভ্রান্ত কোন ধারণা নয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে একমত যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই আত্ম-প্রেম এখন একটা বিরাট জায়গা করে নিয়েছে এবং আগের তুলনায় তা এখন খুবই প্রকট হয়ে উঠেছে। সেলফিকে (Selfie) আরও নিখুঁত করতে এসে গিয়েছে নিত্যনতুন অ্যাপও। সেগুলি কিনে, ব্যবহার করে যাঁরা সর্বদা মজে আছেন সেলফিতে তাঁদের ৮২ শতাংশ বলছেন, নিজস্বী তোলার পিছনে আসলে রয়েছে সকলের মাঝে নিজেকে জাহির করার অদম্য বাসনা।
নিয়মিত নিজস্বী তুলে থাকে বাংলার এমন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে হয়েছে একটি সমীক্ষা। সেই রিপোর্টে উঠে এসেছে চমকে দেওয়া কিছু তথ্য। যাকে কি না তাঁদের মনোজগতের আয়না বললেও ভুল বলা হবে না। সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, গোটা দিনে কমকরে পাঁচটি সেলফি তুলেই থাকেন নিজস্বীপ্রিয় ৫০ শতাংশ যুবক-যুবতী। ২৯ শতাংশ গোটা দিনে তোলেন ১০টা সেলফি। ৭.২ শতাংশ রোজ ১৫টা সেলফি তোলেন। না হলে সম্ভবত তাঁদের ভাত হজম হয় না।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের পরিসংখ্যানবিদ সুদীপ ঘোষ ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর—এই আট মাস ধরে বাংলার আটটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই সমীক্ষা চালান। এই তালিকায় রয়েছেন স্নাতক, স্নাতকোত্তর, পোস্ট ডক্টরাল, পিএইচডি ইত্যাদি মিলিয়ে ৫০৯ জন ছাত্রছাত্রী। সুদীপবাবু বলেন, ‘দেখা গিয়েছে, ‘নিজস্বীপ্রিয়দের একাংশ সেলফি ছাড়া জীবনে আর কিছু বোঝেনই না। ৯.৪৪ শতাংশের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পর্যায়ের নার্সিসিজম দেখা যাচ্ছে। তাঁদের ক্ষেত্রে সেলফি এক ধরনের মানসিক অসুস্থতার রূপ নিয়েছে। ৪০ শতাংশের বেশি নিজস্বীপ্রিয় মাঝারি ধরনের। আর অর্ধেকের বেশি ছাত্রছাত্রী কিছুটা হলেও ভুগছেন নার্সিসিস্ট প্রবণতায়।’

‘নার্সিসিজম’ (Narcissism) আসলে কী? মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিজেকে ভালোবাসা, নিজেকে কেন্দ্র করেই বাঁচা, অন্য কারও ভালোমন্দ কোনও কিছুকেই গুরুত্ব না দেওয়া, যে কোনও প্রাপ্তিকেই নিজের হক বলে মনে করা—এমনই স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক জীবন যাপনকেই ‘নার্সিসিজম’ বলে। যাঁরা এমন স্বভাবের হন তাঁদের ‘নার্সিসিস্ট’ বলা হয়। বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ওপি সিং বলেন, ‘আসলে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এঁদের অনেকে। এই অংশ মনে করেন, তাঁদের গুরুত্ব নেই। তাই বারবার সেলফি তুলে পোস্ট করে গুরুত্ব আদায় করে নিতে হবে। তবে শুধুমাত্র মনস্তাত্ত্বিক দিক বিচার করলেই হবে না, সেলফি, পোস্ট, লাইক—এসবের সঙ্গে এখন বাজার অর্থনীতিও জড়িয়ে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy